গত ১৬ এপ্রিল বেশকিছু পত্রিকায় প্রকাশিত আলেম সমাজের নামে স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৬২ জন বিশিষ্ট আলেম। পাল্টা বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ওটা ‘হেফাজতে ইসলামের’ বর্তমান নেতৃত্বের একটি বিবৃতি। বিবৃতিটি মিথ্যা ও বানোয়াট এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বিবৃতিটির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সমপ্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাদের (হেফাজতে ইসলাম) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের অপকর্ম, ভণ্ডামি এবং দেশ ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যেভাবে দেশের জনগণ ও আলেম-ওলামারা ফুঁসে ওঠেছেন তা আড়াল করা।
পাল্টা বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধীতার নামে হেফাজতে ইসলাম ২৫-২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল। ইসলামকে তারা নিজেদের এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব কওমি মাদরাসার কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে ভুল প্ররোচনার মাধ্যমে তাদের ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর, সরকারি অফিস-আদালত, ভূমি অফিস, পুলিশ স্টেশন, বিদ্যুত্ অফিস, শিশুদের বিদ্যালয়, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত যানবাহনে ও ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়েছিল- যে আগুনের তাণ্ডব থেকে আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফও রক্ষা পায়নি। এরা মূলত ইসলামের শত্রু। ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে, ইসলামকে ব্যবহার আসলে তারা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম কখনোই এ ধরনের জঙ্গি কর্মকাণ্ড, ধর্মের নামে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ সমর্থন করে না ও অনুমোদন দেয় না। বরং এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রচণ্ডভাবে আমাদের ধর্মবিরোধী। প্রকৃতপক্ষে হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব হচ্ছে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী, ভণ্ড ও ধর্মীয় লেবাসধারী। এদের হাতে আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলাম নিরাপদ নয়।
বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতা মামুনুল হক সম্পর্কে বলা হয়, তিনি বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সবসময় নীতি-নৈতিকতার বক্তব্য দিতেন। কিন্তু সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে পরস্ত্রীর সঙ্গে রিসোর্টে সময় কাটাতে গেলে স্থানীয় জনরোষের মুখে পড়েন। জানা যায় তিনি তার প্রকৃত স্ত্রীর নাম দিয়ে এবং নিজের পরিচয় একজন প্রফেসর উল্লেখ করে রুম বুকিং করে ওই নারীর সঙ্গে সেখানে যান। তিনি উত্তেজিত জনগণের কাছে এ নারীকে নিজের স্ত্রী দাবি করলেও পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তার প্রকৃত স্ত্রীর সাথে ফোনালাপে এ নারীকে অন্য ব্যক্তির স্ত্রী দাবি করেন। হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব এ ধরনের ভণ্ড, নারীলোভী, দুঃশ্চরিত্র ও নষ্ট ব্যক্তির অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পক্ষ নেন। যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয় এবং ইসলাম বিরোধী।
সুতরাং দেশের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে হেফাজতের এ ভণ্ড, মিথ্যাবাদী, ধর্মীয় লেবাসধারী নষ্ট নেতৃত্বের ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য। পাশাপাশি কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাবো এসকল মতলববাজ, ভণ্ড, ও রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিদুষ্ট আলেমদেরকে বর্জনের জন্য, যাতে তারা আপনাদের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করতে না পারে।
বিবৃতিতে একইসাথে সরকারের প্রতিও এই ‘ভণ্ড, মিথ্যাবাদী, ইসলামের অপব্যাখ্যাদানকারী, ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের’ বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ৬২ জন আলেমের মধ্যে রয়েছেন- ড. মুফতি কাফিল উদ্দিন সরকার সালেহী, মাওলানা হোসাইন মুরতাজা, মাওলানা আজমির বিন কাসিমী, মালানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আবু তালেব আল ফারাবী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা মোরতজা আমান মাওলানা আমিন হোসেন বিলালী প্রমুখ।
এরআগে শনিবার (১৭ এপ্রিল) হেফাজতে ইসলামকে দেশের ‘ফেতনা সৃষ্টিকারী ফাসেকের দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন দেশের স্বনামধন্য আরও ৫১জন আলেম।