হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ২৩ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব মামলাগুলোর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘটিত তাণ্ডব সংশ্লিষ্ট ১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় পাঁচটি মামলা এবং চলতি বছরে মামলা হয়েছে ১০টি। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলাও আছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান ।
সিআইডির প্রধান জানান, এরই মধ্যে হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৩টি মামলার তদন্তভার পেয়েছে সিআইডি। ২৩টি মামলার মধ্যে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১৫, নারায়ণগঞ্জ ২, কিশোরগঞ্জ ২, চট্টগ্রাম ২, মুন্সিগঞ্জের ২টি। হত্যা, বিস্ফোরক, নাশকতাসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা দায়ের করা হয়।
সিআইডি প্রধান বলেন, হেফাজতে ইসলাম মার্চ মাসের শেষ থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে জ্বালাও-পোড়াও করেছে, আগুন নিয়েছে, অবরোধ করেছে, হরতালের ডাক দিয়েছে। যা প্রচলিত আইনানুযায়ী অন্যায়। ইতোমধ্যে আমরা ২৩টি মামলার তদন্তভার পেয়েছি। আমরা প্রচলিত আইনানুযায়ী তা তদন্ত করবো। আমাদের ফরেনসিক, ডিএনএ, অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন, সাইবার এক্সপার্ট রয়েছেন। তারা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন।
এসব মামলায় মামুনুল হকের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে কিনা- জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। তিনি একটি মামলায় রিমান্ডে আছেন। সেটি শেষ হলে আমরা তাকে রিমান্ডে আনবো।
কোন মামলায় তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গিয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে নারায়ণগঞ্জে দায়ের করা মামলায় তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আমরা মামলাগুলো পর্যালোচনা করছি। যদি অন্য কোনো মামলাতেও তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের একাধিক টিম এসব বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে।
বাবুনগরীসহ হেফাজতের অন্য ঊর্ধ্বতন নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পেলে বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা এসব মামলায় প্রাথমিক তদন্তে তিন ধরনের লোকের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। যারা উপস্থিত থেকেছে, অনুপস্থিত থাকলেও ইন্ধন দিয়েছে এবং দুষ্কর্মে যারা সহযোগিতা করেছে। বাবুনগরীসহ অন্য কারো সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে বলছি না। তবে যদি কারো সংশ্লিষ্টতা পাই তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনের চোখে সবাই সমান। আমরা দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় যদি শাসকদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে সিআইডি প্রধান বলেন, আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করি। তদন্তে যারই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ আইনের চোখে সবাই সমান। আমরা ফুল টিম নিয়ে কাজ করছি, অলরেডি আমরা কয়েকবার সবাই মিলিত হয়েছি। তাদেরকে গাইডলাইন দিয়েছি, তারা কাজ শুরু করেছেন। আমরা রিভিউ করছি, আমরা আমাদের টোটাল এক্সপার্টিসদের ইউজ করব এবং আমরা চেষ্টা করব দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য।
উল্লেখ্য, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও স্থাপনায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় অনেক বাড়িঘর। রেলস্টেশন থেকে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, হিন্দুদের উপাসনালয়, ভূমি অফিস- বাদ যায়নি কিছুই। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনও। হামলার টার্গেট ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোও। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির প্রতি ছিল তীব্র ক্ষোভ। প্রতিটি প্রতিকৃতিই খুঁচিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। বলতে গেলে ওই তিন দিন যেন একাত্তরেরই খণ্ডচিত্র প্রত্যক্ষ করেছে জেলাবাসী। রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া।