গত এক সপ্তাহ ধরে একের পর এক নেতাকর্মী গ্রেপ্তারে দিশেহারা হেফাজতে ইসলাম। সর্বশেষ গ্রেপ্তার করা হয় সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা মামুনুল হককে। নেওয়া হয় সাত দিনের রিমান্ডে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথ খুঁজছেন সংগঠনটির নেতারা। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংগঠনটির নেতারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমণ্ডির বাসায় গতকাল রাত ১০টার দিকে বৈঠক করেন হেফাজতের অন্তত ১০ জন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। তবে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুই পক্ষ থেকেও তাত্ক্ষণিকভাবে কিছু বলা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বলেন হেফাজত নেতারা। গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের কাছে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।
হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদি বলেন, ‘আমি অসুস্থ। কথা বলতে পারছি না।’ তারপরও হেফাজতের মহাসচিব হিসেবে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা একটু কথা বলেছি।’
বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে কি না জানতে চাইলে মামুনুল হকের ভাই মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে, তবে আর কিছু বলার নাই।’
এরপর উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক তাদের কাছে কিছু বলার অনুরোধ জানালেও তারা দ্রুতগতিতে গাড়িতে উঠে চলে যান। এসময় মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি হাত নাড়িয়ে বক্তব্য প্রদানে অস্বীকার করেন।
এর আগে রাত ১০টার দিকে হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় প্রবেশ করেন। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গতকাল দুপুরে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে হেফাজতের পাঁচ শীর্ষ নেতা বৈঠক করেন। হেফাজতের পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজী, মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদী, মামুনুল হকের ভাই বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান (দেওনার পীর), মাওলানা হাবিবুল্লাহ সিরাজী প্রমুখ।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলনের নামে তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। সে সময় হেফাজতের শীর্ষ নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ না করেই একাধিক মামলা করা হয়। তবে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের পর শক্ত অবস্থানে যায় সরকার। গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায়ই হেফাজতের মধ্যম ও শীর্ষ পর্যায়ে ৯ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়া হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। হেফাজতের নেতারা চাইছেন, আর কোনো নেতাকর্মীকে যেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক বা গ্রেপ্তার না করে।