ইসলাম ও দান-খয়রাতঃ প্রসঙ্গ কওমি মাদ্রাসা

সম্পাদকীয়

মোকতাদির চৌধুরী এমপি
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

আমরা পবিত্র রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ পার করে দ্বিতীয় সপ্তাহে পৌঁছেছি। প্রত্যেক রোজাদার তার সাধ্যানুযায়ী রোজা রাখছেন। সততা, ন্যায় নিষ্ঠা এবং অহং ত্যাগকরার শিক্ষা দেয় রোজা। প্রচলিত নিয়মানুসারে রোজাদার এই মাসে প্রচুর দান-খয়রাত করেন সামর্থ্য অনুযায়ী এবং যাকাত দানকারীগণ সাধারণতঃ এই মাসেই যাকাত প্রদান করে থাকেন। এই সমস্ত দান-খয়রাত ও যাকাতের একটা বড় অংশ মাদ্রাসার এতিম খানায় বিশেষতঃ কওমি মাদ্রাসায় প্রদান করা হয়ে থাকে।

যাকাত এবং দান-খয়রাত ইসলামের আর্থিক বিধি-বিধানের অন্তর্গত। যাকাত তন্মধ্যে বাধ্যতামূলক বা ফরজে আইন। যারা যাকাত দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন, তারা অবশ্যই হালাল উপায়ে অর্জিত সম্পদের উপর যাকাত প্রদান করবেন। দান-খয়রাতের ব্যাপারেও হালাল উপায়ে সম্পদ অর্জনের শর্তারূপ আছে।

আমাদের দেশের চলতি নিয়মানুযায়ী এই অর্থের এবং হালাল উপায়ে অর্জিত নয় এমন অর্থের বেশ বড় পরিমাণই কওমী মাদ্রাসা এবং এতিমখানায় প্রদান করা হয়ে থাকে। বেহালাল পথে অর্জিত অর্থ গ্রহণ জায়েজ কিনা, যারা গ্রহণ করে তারাই ভালো জানে। আমাদের জানামতে সাদকা, লিল্লাহ আর যাকাত গ্রহীতাগণ হালাল হারামের বাছ বিচার করে না, বিশেষতঃ মাদ্রাসা আর এতিমালয়ের মালিকগণ।
তা না করুক। এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু যাকাত এবং অন্যান্য দানের হকদার কারা? কুরআন-হাদিস অনুসারীগণ অবশ্যই বলবেন যে এসবে প্রকৃত হকদার হচ্ছেন দরিদ্র, স্বজন (এমনকি পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও অন্যান্য), এতিম (ব্যবসার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাভিত্তিক এতিমখানায় নয়), ভ্রমণপিয়াসী, শিক্ষার্থী (লাঠিসোটা নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এমন শিক্ষার্থী নয়। কেননা আল্লাহ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে—- সন্ত্রাসীদের পছন্দ করেন না) আল-কোরান। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিগণও যাকাত, সাদকা ও দান-খয়রাতের উপযুক্ত ব্যক্তি। এই সবের কোনই লক্ষণ নেই কওমি মাদরাসাগুলিতে (বিশেষতঃ হেফাজত নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোতে)।

সুতরাং যাকাত, সাদকা, দান-খয়রাত, ব্যবসার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত (বা একসময় সৎ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত—যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামেয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা। কতিপয় সন্ত্রাসী ও মিথ্যাচারী ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত)। এইসব মাদ্রাসা ও এতিমখানায় যাকাত, সাদকা ও অন্যান্য দান-খয়রাত কোনভাবেই জায়েজ নয়।

হেফাজত
২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত কর্তৃক পরিচালিত তাণ্ডবের জন্য রাজপথে নেমে নির্দেশনা দিচ্ছেন মাওলানা সাজিদুর রহমান।
হেফাজত নিয়ন্ত্রিত কওমি মাদরাসার ছাত্রদের আগুনে জ্বলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন
২৬মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত কর্মীরা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বিনষ্ট করছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল।
২৬মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত কর্মীরা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বিনষ্ট করছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল।

যেখানে দুষ্কর্ম ও অপরাধমূলক কাজের প্রশ্রয় দেয়া হয় না, হারমাদি শিক্ষা দেয়া হয় না, লাঠিসোটা নিয়ে বের হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয় না, আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের ইমরুল কায়েসদের রচনা পড়ানো হয় না, সে সব জায়গায় শর্তসাপেক্ষে টাকা দেওয়া যেতে পারে, আত্মীয়-স্বজন, পড়শী, গ্রামবাসী, এলাকাবাসী দ্বীন দরিদ্রের হক আদায় করার পর।

অতএব, আসুন, আমরা পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনানুসারে প্রথমে স্বজন ও প্রতিবেশীদের যাকাত, সাদকা আর দান-খয়রাত প্রদান করি। যদি এরপরেও সামর্থ্য থাকে, তাহলে হেফাজত ও জামায়াত নিয়ন্ত্রিত (মালিকানাধীন— ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরেই শতাধিক মাদ্রাসা রয়েছে, সবগুলোই মালিকানাধীন) মাদ্রাসা-এতিমখানা ব্যতীত অন্যদের ওখানে যাকাত, সাদকা বা লিল্লাহ দেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন >> মাননীয় মন্ত্রী দয়া করে এসব প্রশ্নের একটু ব্যাখ্যা দিবেন কী?

শেয়ার করুন