ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা থাকলেও গত দুই মাসে কোনো চালান আসেনি। কবে নাগাদ টিকার চালান আসতে পারে, তা কেউ বলতে পারছে না। সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনেওয়ালা বুধবার এনডিটিভিকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আগামী তিন মাসে টিকা রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছেন না তারা। এই অবস্থায় বাংলাদেশ বিকল্প উপায়ে টিকা ব্যবস্থার কথা ভাবছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগে থেকেই বিকল্প না রেখে একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল থাকার কারণে বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ভারত আমাদের জানিয়েছে যে, তারা ভ্যাকসিন পাঠাবে। তারা কখনোই বলেনি যে, তারা ভ্যাকসিন পাঠাতে পারবে না।’ ভারতে আশ্বাসে ঢাকার আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চুক্তির সময়সীমার মধ্যেই আমরা ৩০ মিলিয়ন ডোজের সব ভ্যাকসিন পাব বলে ঢাকা আশাবাদী। যদিও, ঢাকা আশংকা করছে যে, ভারতে উৎপাদিত ভ্যাকসিন তাদের নিজ দেশের টিকার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ও বিদেশি দেশের সাথে টিকা প্রদানে তাদের যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা পূরণে পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, ‘তারা সামর্থে্যর চেয়ে বেশি অর্ডার (ক্রয়াদেশ) নিয়ে ফেলেছে।’
তবে এদিন মন্ত্রী জানান, একটি সহ-উৎপাদন ব্যবস্থার আওতায় বাংলাদেশে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালগুলোর সহযোগিতায় তাদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক’ উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিনের সহ-উৎপাদনে তাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছি। যদিও এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।’
সহায়তা পেলে বাংলাদেশেই স্পুটনিক ভি উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ওষুধ প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে এরইমধ্যে বিশ্বমানের ওষুধ প্রস্তুতে সক্ষম এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার কারণে এখানেই করোনাভাইরাসের টিকাও উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বিবিসিকে বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশেই টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়ে থাকলে সেটি সময় ক্ষেপণ না করে অনুমোদন দিয়ে দেয়া দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অন্তত তিন থেকে চারটা ওষুধ কোম্পানি রয়েছে যারা টিকা বানাতে সক্ষম।
ফারুক বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি এখন আর আগের অবস্থায় নাই। এগুলো আগের তুলনায় অনেক অনেক বেশি উন্নত। বিশ্বমানের কোম্পানিও রয়েছে কয়েকটি।
বাংলাদেশে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করে থাকে বলে জানান তিনি। এমনকি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নানা ওষুধও বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে রপ্তানি করা হয়।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘টিকা উৎপাদনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানানোই যায়, কারণ বাংলাদেশে বাকি সবই আছে। মেশিনপত্র আছে, ফ্যাক্টরি আছে, দক্ষ জনবল আছে- শুধু প্রযুক্তি যদি পাওয়া যায় তাহলেই উৎপাদন শুরু করা সম্ভব।’
এক্ষেত্রে টিকার মানের কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন না তিনি। কারণ বাংলাদেশে সেই ধরনের সক্ষমতা আছে।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলমও জানিয়েছেন, টিকার ব্যাপারে বিকল্প ভাবনার কথা। তিনি জানান, এখন সিরামেরসঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়া এবং চীন থেকে টিকা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, ‘আমরা যদি এখান থেকে না পাই তাহলে আমাদের অন্যত্র খুঁজতে হবে এবং আমরা তা শুরু করে দিয়েছে। আমরা রাশিয়া এবং চীনের সাথে যোগাযোগ করেছি।’
রাশিয়া এবং চীন থেকে টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে কি না-এই প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক আলম বলেন, ‘এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে রাশিয়া এবং চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে যে, তারা দিতে চায়। ইতিমধ্যে আমাদের দুই তিনটা বৈঠকও হয়েছে।’
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)’র অনুমোদন না থাকায় বাংলাদেশ এর আগে চীনের ভ্যাকসিনের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা ভ্যাকসিনটি পেতে সম্ভাব্য সবধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও চীন বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে, তারা ইতিমধ্যেই তাদের ভ্যাকসিনটি অন্যান্য দেশে সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় ডিসেম্বরের আগে তারা আর কোনো ভ্যাকসিন রপ্তানি করতে পারবে না।
সেরাম আর কোনো টিকা দিতে না পারলে এবং চীন থেকেও টিকা না পেলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে রাশিয়ার টিকা দেশে উৎপাদন করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই হবে বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ বিকল্প।