জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, হেফাজতের আমির বাবুনগরীর ‘লকডাউন তুলে নেয়ার বিনিময়ে সবাইকে সাথে নিয়ে জেলে যাবো’ বক্তব্য অত্যন্ত নিম্নমানের চতুরতা, ধূর্ততা, ধরিবাজি, চটকদারিতা, অসততা, মিথ্যাচার,ভন্ডামি আর দ্বৈততার বহিঃপ্রকাশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাবুনগরী লকডাউনকে এমনভাবে চিহ্নিত করেছে যে, লকডাউন বাংলাদেশ সরকারের আবিষ্কার। সরকার লকডাউন দিয়েছে দেশের সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিতে, হেফাজতি নেতাদের গ্রেফতার করতে আর মুসলমানদের ইবাদত বন্ধ করতে। লকডাউন নিয়ে বাবুনগরীর বক্তব্য জাজ্বল্যমান মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। লকডাউন বাংলাদেশ সরকারের আবিষ্কার না। শুধু বাংলাদেশেই লকডাউন দেয়া হয়নি। ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ বিস্তার রোধ করে মানুষের জীবন বাঁচাতে সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সকল মুসলিমদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ সারা দুনিয়ার দেশে দেশে দফায় দফায় লকডাউন হয়েছে। লকডাউনে মসজিদুল হারামসহ মুসলিম দেশগুলিতে কখনও মসজিদ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কখনও পরিস্থিতি একটু নিয়ন্ত্রণে থাকলে বৈজ্ঞানিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে খোলা রাখা হয়েছে। লকডাউন মুসলমানগণ ইবাদত-বন্দেগি, নামাজপড়া, রোজা রাখা, কোরান শরীফপড়া বন্ধ করেননি। লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঘরেই নিরবচ্ছিন্নভাবে ইবাদত করছেন। তারা বলেন, সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করার সাথে লকডাউনকে মিলিয়ে দেয়াও বাবুনাগরির নিকৃষ্ট চতুরতা, চালাকিপনা, ধূর্ততা, ধরিবাজি মার্কা কথা।
তারা বলেন, লকডাউনে কি ফৌজদারি মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত আসামি গ্রেফতারে রাষ্ট্রীয় আইনে এমনকি ইসলামে কোনো বাঁধা আছে? তারা বলেন, বাবুনগরির দেশের সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে কথা বলা মায়াকান্না ও ভন্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। বাবুনগরি, মামুনুলরা মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে পূঁজি করে মানুষের সাদকা-যাকাত-দানের টাকায় ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাস-আমোদ-প্রমোদেই জীবন কাটায় তার প্রমাণ মানুষের সামনে প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যখন লকডাউনে কর্মহীন আয়হীন নিরুপায় অসহায় মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা, নগদ সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপ আরও সম্প্রসারণ ও ত্রুটিমুক্ত করার দাবি করে আসছে তখন হেফাজত মুখ বন্ধ করে রাখে। হেফাজত লকডাউনে কষ্টেপরা মানুষদের জন্য সাদকা-যাকাত দেয়ার আহবানও জানায়নি। হেফাজত ব্যস্ত আছে বিএনপি-জামাতের ভাড়াটে খেলোয়ার হিসাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার খেলায় আর সরকারের সাথে দেনদরবার করে নিজেদের অপরাধ আড়াল করায়।
এতে বলা হয়, বাবুনগরির লম্বা লম্বা চতুর, ধূর্ত, চালাকি, ধরিবাজি, চটিকদারি কথা বাদ দিয়ে, আত্মগোপনে না থেকে সুনির্দিষ্ট ফৌজিদারি মামলায় অভিযুক্ত হেফাজতি তান্ডবিরা আদালত বা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধার প্রমাণ দিক। তারা বলেন, একইমুখে লকডাউন তুলে নেয়ার বিনিময়ে নিজ থেকে জেলে যাবার কথা বলে সেইমুখেই সুনির্দিষ্ট ফৌজিদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতারকৃত আসামিদের মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবি করে বাবুনগরি নিজেই প্রমাণ দিয়েছে তার নিকৃষ্টতা দ্বৈততা ও ভন্ডামির। কয়লা ধুইলে যেমন ময়লা যায় না, বাবুনগরির সাম্প্রদায়িক ও অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি বিদ্বেষী মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মুসলিম ভিন্ন অন্য ধর্মের অফিসারদের নিয়ে চরম সাম্প্রদায়িক, বিদ্বষী কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
জাসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, হেফাজতসহ রাজনৈতিক মোল্লাদের চতুরতা, ধূর্ততা, চালাকি, ধরিবাজি, চটিকদারিতা, অসততা, ভন্ডামি, দ্বৈততা ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ রাষ্ট্রদ্রোহীর বিরুদ্ধে সকল দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, মানবতাবাদী, শোভন রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি, ব্যক্তি ও মহলকে সোচ্চার হবার আহবান জানান।