চলমান করোনাভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশের প্রায় ৭৮ শতাংশ নারী-প্রধান পরিবার অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, অর্থনৈতিক সংকটে থাকা অধিকাংশ নারী অনানুষ্ঠানিক খাতের। তাদের অনেকেই কাজ বা চাকরি হারিয়েছেন, পাশাপাশি ঘরের কাজের চাপও বেড়েছে।
‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে সংসারে সেবাকাজের দ্রুত বিশ্লেষণ’ শীর্ষক জরিপের তথ্যে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে আরও জানা গেছে, রান্না করা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ধোয়ার কাজ গ্রামীণ নারীর মতো হলেও শহরে নারীর কাজ ১২৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে এই মহামারির সময়ে।
জরিপ অনুযায়ী, সাড়ে ৭১ শতাংশ গৃহিণী মহামারির আগে প্রতি দিন তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা গৃহস্থালীর কাজ করতেন। করোনাকালে তাদের মধ্যে প্রায় ৩৮ শতাংশের গৃহস্থালীর কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে। মহামারি চলাকালীন ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী নারীকে গৃহস্থালির কাজে প্রায় চার ঘণ্টারও বেশি সময় দিতে হয়েছে।
পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ফোরাম ‘ফরমাল রিকগনিশন অব উইম্যান’স আনকাউন্টেড ওয়ার্ক’ এর উদ্যোগে এক ওয়েবিনারে শনিবার (২৪ এপ্রিল) এই জরিপটি উপস্থাপন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। ফোরামটির সদস্য সংস্থাগুলো হলো- মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংস্থা, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ও অক্সফাম।
জরিপে গ্রামীণ ও শহুরে পরিবারগুলোতে চাকরি হারানো, দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি, নারীদের আয় কমে যাওয়া এবং পুরুষ ও নারীর গৃহস্থালীর কাজের অনুপাত তুলে ধরা হয়েছে।
২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের নয়টি গ্রাম ও শহুরে জেলাগুলোতে এই জরিপ চালানো হয়। যেখানে ৩১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৮৭ শতাংশ নারী ও ১৩ শতাংশ পুরুষ অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ গৃহিনী ও অন্যরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত।
শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, যখন অভাবের কারণে সম্পদ হাতছাড়া হতে শুরু হয় তখন এর মধ্যে “জেন্ডার কস্ট” এর ইস্যু লুকিয়ে থাকে। কারণ অভাব অনটনের সময় নারীর সম্পত্তিই প্রথমে হাতছাড়া হয়। অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে প্রথমে পাড়া প্রতিবেশীর থেকে ধার করে মানুষ। এরপর ছোটখাট জিনিস যেমন স্বর্ণালংকার ও ছোট পশুপ্রাণী বন্ধক রাখা হয়, যেগুলোর মালিক সাধারণত নারীই হয়ে থাকে। এরপর আসে বাড়ি, জমি বা গরু বিক্রি। অভাবের সময় যৌক্তিক কারণেই নারীর মালিকানাধীন ছোটখাট জিনিস আগে বিক্রি করা হয়। সেক্ষেত্রে সবদিক থেকেই নারীই সর্বস্বান্ত হয় প্রথমে।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, আমরা নারীর কাজকে দায়িত্ব মনে না করে যেদিন কাজ বলে মনে করতে শিখবো সেদিনই নারীর কাজের মূল্য যোগ হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের দেখতে হবে এই অনানুষ্ঠানিক কাজকে আমরা কীভাবে জাতীয় ডেটাবেজে সন্নিবেশিত করতে পারি। আমরা নারীর এই শ্রমকে আসছে অর্থবছরের এসএনএতে যোগ করতে চাই। নারী যে প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় কাজ করছে, সেটারও একটা মনিটরিং ভ্যালু বের করতে হবে।
ওয়েবিনারে জরিপের উপর আলোচনা করেন বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, অক্সফাম উম্যান এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড কেয়ার প্রোগ্রামের ম্যানেজার সারা হল, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, ইউ এন উম্যানের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সোকো ইশিকাওয়া, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীরসহ অনেকে।