সরকার দেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এমন দাবি করে এর দায় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পদত্যগ দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল এই দাবি করেন।
ভ্যাকসিন আমদানিতে সরকারের এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা রয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই বিএনপি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে বলে আসছে। মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া এবং একটি উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত যে আত্মঘাতী হতে পারে সে বিষয়ে বিএনপি বরাবরই সতর্ক করে এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার শুধু নিজেদের আর্থিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজে আমদানি না করে তাদের পছন্দমতো চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে। শুধু ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করায় এবং দেড় কোটি ভ্যাকসিনের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করেও এখন পর্যন্ত দুই কিস্তিতে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ পেয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারত সরকারের রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে সিরাম ইনস্টিটিউট বাকি ভ্যাকসিন পাঠাতে অপারগতা জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এখন যে পরিমাণ মজুদ আছে সেটাতে আগামী ১২ দিন চাহিদা মোতাবেক চলবে, কিন্তু তারপর আর সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ প্রায় ৫৬ লাখ এবং দ্বিতীয় ডোজ প্রায় ১৬ লাখ অর্থাৎ মোট ৭২ লাখ ডোজ টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। যেখানে হার্ড ইনিউনিটি আনতে কমপক্ষে ১২ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া প্রয়োজন। সরকার এখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে ভ্যাকসিনের জন্য, অথচ এক বছর আগেই বিএনপি এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার শুধু নিজেদের দুর্নীতির সুযোগ খুঁজেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে সমগ্র জাতিকে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেদের অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির প্রমাণ দিয়েছে। জনগণকে এই চরম অনিশ্চয়তা ও জীবনের ঝুঁকি তৈরি করার অপরাধে সরকারকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবিলম্বে মূল্য পরিশোধিত ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে। ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। অবিলম্বে জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনে ২০২০ সালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ প্রায় দুই কোটি বিপর্যস্ত দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সরকার প্রায় ২০ জন মানুষকে গুলি করে হত্যার পর চিরাচরিত কৌশল নিয়ে বিরোধীদল ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। নেতাকর্মীরা কেউ বাড়িতে অবস্থান করতে পারছেন না। এরপরও পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএনপিসহ সকল স্তরের নেতাকর্মীদের দুস্থ জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
চালের আপদকালীন মজুদ তলানিতে নেমে এসেছে- গণমাধ্যমে এমন খবরের কথা উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, সরকারের মদদপুষ্ট মধ্যস্বত্ব ভোগীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকারের দুর্নীতি ও অযোগ্যতার কারণে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে সরকার সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গণহারে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ক্রমাগত মিথ্যাচার এবং ঘটনাগুলোর সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করে কল্পকাহিনি প্রচার করছে। এটা বিএনপিকে ধ্বংস করার এটা একটা গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করা হয়। গ্রেপ্তার হেফাজত নেতৃবৃন্দকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তাদের থেকে তথাকথিত মিথ্যা স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এই জঘন্য মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে। অবিলম্বে এসব মিথ্যাচার বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান যুক্ত ছিলেন।