সরকারি স্থাপনায় আক্রমণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার ২০ ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (২৬ এপ্রিল) প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা সচিব মুফতি শামসুল হক সরাইলী স্বাক্ষরিত এক বহিষ্কারাদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২০২০/২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের অত্র জামিয়ায় ভর্তি পালনীয় শর্তাবলীর ২৫ নং ধারায় মাদ্রাসার সমুদয় রীতিনীতি ও আইনকানুন অমান্য করে হুজুরদের বাধা উপেক্ষা করে গত ২৬ মার্চ সরকারি স্থাপনায় আক্রমণ করার সংবাদ পাওয়ার ভিত্তিতে তাদেরকে বহিষ্কার করা হলো।
বহিষ্কার হওয়া ছাত্ররা হলেন- আশেক এলাহী, মিজবাহ উদ্দিন, আবু হানিফ, আশরাফুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, মকবুল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মোবারক উল্লাহ, বুরহান উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আফজাল, জুবায়ের, জুবায়ের, হিজবুল্লাহ রাহমানী, শিব্বির আহমেদ, ইফতেখার আদনান, সাইফুল ইসলাম, সোলাইমান, রাকিব বিল্লাহ, তারিক জামিল ও হাবিবুল্লাহ।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে হেফাজতের ব্যানারে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ২৬ মার্চ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালিয়ে জাতির জনকের ম্যুরাল ভাংচুরসহ পুলিশসুপারের অফিসে ভাংচুরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
এ ছাড়াও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে হরতাল সমর্থকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শহীদ ধীরেন্দ্রসনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, সুর সম্রাট স্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরীরেত পরিণত করে।
তাণ্ডবের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫৬টি। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইল থানায় ২টি এবং আখাউড়া রেলওয়ে থানায় একটি। এসব মামলায় ৪১৪ জন এজাহারনামীয় আসামি ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো প্রায় ৩৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় গ্রেপ্তার হয়েছে মোট ৩৬৯ জন
এদিকে তাণ্ডব চলাকালীন সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রশাসন ছিল সম্পূর্ণ নীরব দর্শকের ভূমিকায়। তারা সেসময় সহিংসতা বন্ধের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। এমনকি হরতালে দিন পিকেটাররা যখন সদর থানার দিকে ঢিল ছুড়ছিল, তখন সদর থানা থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয়, ‘বিক্ষোভকারী ভাইয়েরা আপনারা আমাদের ওপর ঢিল ছুঁড়বেন না, আমরা আপনাদের সাথে আছি’! এসব বিষয়ের প্রেক্ষাপটে ২৬ এপ্রিল বিকেলে পুলিশ সদর দফতরের এক আদেশে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিমকে।