গত মার্চে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর ঢাকায় এসে বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রীক সংযুক্তির ওপর জোর দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, ওই সাগর সন্নিবেশিত ৯টি দেশে চীনের উপস্থিতি কমানোর প্রতি ঈঙ্গিত করেছিলেন তিনি। এর একমাসের মধ্যে ভারতের সেনাপ্রধান পাঁচদিনের সফরে ঢাকা আসেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশে ভারতীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতির প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) চীনের উদ্যোগে টিকা সহযোগিতার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন ওই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। আবার একইদিনে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী উই ফেঙ্গে একদিনের জন্য ঢাকায় আসেন। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করা ছাড়াও সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ঢাকায় অবস্থানকালে ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন ও এর সঙ্গে জড়িত দেশগুলোর বিষয়ে বেইজিংয়ের অবস্থান এবং এই প্রেক্ষাপটে চীন কী চায় এবং কী করবে তা নিয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশকে এই বার্তা দিতে চান যে, বেইজিং মনে করে কয়েকটি দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক বলয়ে একটি জোট তৈরি করার মাধ্যমে চীনের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনও দেশকে চ্যালেঞ্জ করার অভিপ্রায় চীনের নেই এবং তারা শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন চায়। এই বার্তার বিপরীতে চীন বাংলাদেশের কাছে কিছু চায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, চীনের সঙ্গে যোগাযোগ একটি চলমান বিষয়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাকতালীয়ভাবে একই দিনে অনুষ্ঠান পড়ে গেছে।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর গতবছরের শেষে আসার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময়ে কোভিড পরিস্থিতির জন্য আসতে পারেননি। এবার এই অঞ্চলের অন্য দেশও তিনি সফর করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, কোভিডের জন্য অনেক কিছু বন্ধ ছিল। কিন্তু যখন তারা দেখলো অন্য দেশের যেমন ভারতীয় সেনাপ্রধান ঘুরে গেলেন, সেই কারণেই স্বাভাবিকভাবে তারা পেছনে পড়ে থাকতে চাননি।
আগ্রহ বাড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের আগ্রহ তো আছেই। শুধু করোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই নানা স্তরে যোগাযোগ হচ্ছে। সেই হিসেবে বলা যায় আগ্রহ বাড়ছে। কারণ এর আগে কোভিড সহযোগিতা বলে কিছু ছিল না।
ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমি অনেকবার বলেছি যে ইন্দো-প্যাসিফিকে যদি অর্থনৈতিক স্বার্থ থাকে তাহলেই শুধু আমরা সেখানে অংশগ্রহণ করতে চাই। এরমধ্যে যদি নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু থাকে, তবে বাংলাদেশের নন-অ্যালায়েন্স অবস্থানের কারণে যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না।
কোভিড-১৯ নিয়ে বৈঠক
চীনের উদ্যোগে চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয় মঙ্গলবার। এই অঞ্চলে চীনের যে লিংকেজগুলো আছে, সেগুলো শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ে এর আগে আমি দুটো বৈঠক করেছি। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও হয়েছে। প্রক্রিয়াটি তিন-চারমাস ধরে চলে আসছে। এর আগে নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন আমরা কংক্রিট কিছু দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, চীন এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় এবং বাংলাদেশ চায় শুধু কোভিড সহযোগিতা। এর বেশি কিছু নয়।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, চীন চেয়েছিল এই সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দিতে। কিন্তু আমরা বলেছি যেভাবে আছে সেভাবেই চলুক। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হলে এটি অনমনীয় হয়ে যাবে।