ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডব স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কাজ: ডিআইজি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ডিআইজি) মো. হাবিবুর রহমান

বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. হাবিবুর রহমান।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে এ ধরনের আচরণ করা সম্ভব নয়। এটি সম্পূর্ণ স্বাধীনতাবিরোধী ও ইতিহাস-ঐতিহ্যবিরোধী কাজ। বাংলাদেশকে যেন পিছিয়ে দেওয়া যায়, এটি সে ধরনের স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের কাজ বলে আমি মনে করি। যারা এ ঘটনার পেছনে ইন্ধনদাতা, যারা পরিকল্পনাকারী, তারা ঘটনাস্থলে থাক বা না থাক, অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে। কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তারা আইনের আওতায় আসবে।

তিনি বলেন, জেলা পুলিশ ও সিআইডি এবং পিবিআই সম্মিলিতভাবে মামলাগুলো তদন্ত করছে। আমরা সবাই সমন্বয়ের মাধ্যমে তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে মামলাগুলো তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কারা কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করছি। ভিডিও ফুটেজ থেকে আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে অনেককেই শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো মামলাই ঝুলে থাকবে না, যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তির দিকে যাবে।

এর আগে ডিআইজি হাবিবুর রহমান হেফাজতের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন ও সদর উপজেলা ভূমি অফিস পরিদর্শন করেন।

এ সময় ডিআইজির সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান, সিআইডির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. শাহরিয়ার রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া, সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে হেফাজতকর্মীদের দেয়া আগুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে হেফাজতকর্মীদের দেয়া আগুন। ছবি : সংগৃহীত

উল্লেখ্য, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় হওয়া ৫৬টি মামলার মধ্যে ১০টি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। এছাড়া ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে মাদরাসাছাত্রদের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ৫টি মামলার তদন্তভারও সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে হেফাজতের ব্যানারে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ২৬ মার্চ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালিয়ে জাতির জনকের ম্যুরাল ভাংচুরসহ পুলিশসুপারের অফিসে ভাংচুরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।

এ ছাড়াও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে হরতাল সমর্থকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শহীদ ধীরেন্দ্রসনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, সুর সম্রাট স্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরীরেত পরিণত করে।

হেফাজতের আগুনে পুড়ে ছাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন। ফাইল ছবি

এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি সবাই অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী। ৫৬টির মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইল থানায় ২টি ও আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা হয়।

এসব মামলায় শনিবার (১ মে) সকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় মোট ৩৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে হেফাজতের পদধারী কেবল তিনজন নেতা রয়েছেন।

শেয়ার করুন