করোনাভাইরাস সংকটকালীন পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া অস্বচ্ছল পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ফলে নাগরিকদের প্রতি সংস্থাটির আন্তরিকতা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
এদিকে আর্থিক বা খাদ্যসামগ্রী সহায়তা পেতে ডিএসসিসির কাউন্সিলরদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন নিম্নআয়ের লোকজন। কাউন্সিলরেরা বলছেন, প্রতিদিন শতশত লোক তাদের কার্যালয়ে আর্থিক সহায়তা অথবা খাদ্যপণ্যের জন্য ভিড় করছেন। কিন্তু তাদের কোনো সহযোগিতা করতে পারছেন না তারা। এর মধ্যে কয়েকজন কাউন্সিলর নিজ উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন । আর যে কাউন্সিলরদের সামর্থ্য নেই, তাদের এক ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। তাই সরকারের দিকে না তাকিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন কাউন্সিলরেরা।
তবে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ধরনের সংকটে সাধারণত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সহায়তা করে থাকে। তাই এই সহায়তা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন তারা। কিন্তু কবে নাগাদ এই সহায়তা তারা পাবেন তা নিশ্চিত নন। এখন নিজ তহবিল থেকে কিভাবে অর্থ ছাড় করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
গত ২৫ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় করোনার কারণে কর্মহীন মানুষের মানবিক সহায়তা বাবদ ৫৭৪ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব সিটি করপোরেশনের অনুকূলে শিশুখাদ্য কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে সেই অর্থ পৌঁছায়নি।
ডিএনসিসি
করোনার সংক্রমণ রোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) চলছে। লকডাউনে অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ভাসমান লোকজন অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে গত ২০ এপ্রিল থেকে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। এর ছয়দিন পর আরও এক লাখ ৭০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেন তিনি। এই টাকা দিয়ে প্রতি ওয়ার্ডে ৫০০ জন দরিদ্র নারীকে শাড়ি দেয়া হবে।
ডিএনসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফছার উদ্দিন খান বলেন, ডিএনসিসি মেয়রের নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়ার্ডের দরিদ্রদের একটি তালিকা করা হয়েছে। বরাদ্দের টাকা পাওয়ামাত্রই বিতরণ করা হয়েছে। এখন শাড়ি বিতরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরও লকডাউনের সময় কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নিজ দায়িত্বে রাতের আঁধারে প্রত্যেকের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছি। এবারও সরকারের অপেক্ষায় থাকিনি। সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে প্রত্যেক ওয়ার্ডে টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।
তিনি বলেন, লকডাউন দীর্ঘমেয়াদী হলে মানুষের ঘরে কমবেশি খাদ্য সংকট দেখা দেবে। সেটা বিবেচনায় নিয়েই নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ ছাড় করেছি। এরমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অনুদান এলে তার সুষম বণ্টন করা হবে।
ডিএসসিসি
গত বছর করোনার শুরুতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরপরই কয়েক লাখ নাগরিককে খাবার সরবরাহ করে ডিএসসিসি। এর মধ্যে মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে খাদ্যপণ্য বিতরণ সহজ করতে হটলাইন চালু করেছিল সংস্থাটি। এই হটলাইন নম্বরে কেউ সহযোগিতা চেয়ে কল করলে তাদের বাসায় খাদ্যপণ্যও পৌঁছে দেয়া হতো। কিন্তু এবার এখনো ডিএসসিসির পক্ষ থেকে এই ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ডিএসসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, লকডাউনের পর প্রতিদিন শতশত মানুষ আমার কাছে সাহায্য সহযোগিতা চায়। সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ না পাওয়ায় তাদের সহযোগিতা করা যাচ্ছে না। তবে পহেলা রমজান থেকে নিজ উদ্যোগে প্রতিদিন দুই হাজার মানুষকে ইফতার (পোলাও, মুরগি, ডিম) দিয়েছি। সিটি করপোরেশন থেকে এককালীন কিছু টাকা পাওয়া গেলে এই সহযোগিতার মাত্রা আরও বাড়ানো যেতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের সচিব দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তা সরাসরি সিটি করপোরেশনের তহবিলে আসে না। তারা জেলা প্রশাসন বরাবর অর্থ বরাদ্দ দেয়। সেই অর্থ সিটি করপোরেশন সমন্বয় করে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এর চেয়ে নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া অনেক সহজ। এই ধরনের বরাদ্দে মেয়রের একক ক্ষমতা রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে সংস্থার প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তিউন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন জানান, তারা এখনো সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পাননি। পেলে বিতরণ করবেন। তবে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।