ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের সম্প্রতি বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমীর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোবারক উল্লাহসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১ থেকে দেড়শ জনকে আসামী করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবী ও শহর আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মো: মামুন মামলাটি সদর থানায় দাখিল করেছেন।
মামলার উল্লেখিত প্রধান দুই আসামী ছাড়াও ১২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হলেন, মাওলানা আশরাফুল হোসেন তপু, বোরহান উদ্দিন কাসেমী, মাওলানা আলী আজম, মাওলানা এরশাদ উল্লাহ, মাওলানা জুনায়েদ কাসেমী, মাওলানা নোমান আল হাবিব, মমিনুল হাসান তাজ, সুলেমান মোল্লা, মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা আব্দুল হাকিম, মাওলানা মনজুরুল হক ও খালেদ মোশাররফ। এছাড়া আরও অজ্ঞাত এক থেকে দেড়শ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিবরণীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র করে গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার নেতাকর্মীরা। তারা তাণ্ডব চালিয়ে বৈধ সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্র, গান পাওডার সহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করেন।
‘এর আগে হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং সাধারন সম্পাদক মাওলানা মোবারক উল্লাহ সহ অন্যান্য আসামীদের নির্দেশে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ, আইডি ও নিউজনপোর্টালে সাইবার সন্ত্রাস সংগঠিত করে রাষ্ট্রদ্রোহীতামূলক, বিদ্বেষ ও ঘৃনা মূলক স্ট্যাটাস প্রদান করে জনসাধারনের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।এর মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটে।’
‘শুধু তাই নয়, মামলার এজাহারনামীয় আসামী সহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা উপস্থিত থেকে ইলেকট্রনিক্স বিন্যাসের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যা তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বক্তব্য জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ার নিজস্ব ফেইসবুক পেইজে প্রচার করে। এরই এক পর্যায়ে তারা গত ৩১মার্চ আসামীগণ তাদের ব্যবহৃত ফেসবুক পেজ জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া এর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য প্রদান করে বাদী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি ঘটনার দায়ভার তার উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।’
‘আসামিদের এরূপ বক্তব্য তাহাদের ডিজিটাল বিন্যাসের মাধ্যমে জাতীয় ও স্থানীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া প্রকাশ ও প্রচার করেন তারা। ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুসলিম জনসাধারণের মধ্যে শত্রুতা ঘৃণা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। এতে আইনশৃংখলার চরম অবনতি হয়। পাশাপাশি সমগ্র দেশে ও বহির্বিশ্বের আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে আমি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও প্রপাগান্ডা চালায়। যাহা ২০১৮ইং সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর ধারা অপরাধ সংগঠিত করে। বিষয়টি আমাকে সাক্ষিরা অবগত করলে ঘটনার দ্বিতীয় তারিখ (২৭ মার্চ) ও সময়ে ঘটনাস্থলে আমি উক্ত বক্তব্য দেখে স্ক্রিনশট নিয়ে হার্ড কপি সংগ্রহ করি। এসব স্কিন শর্ট মামলায় যুক্ত করা হয়েছে।’
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ শাহজাহান এজাহার পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সাংসদের মামলার এজাহার থানায় গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নথিভুক্ত করার আগে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও নির্দেশের প্রয়োজন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।