রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ৬ দিনের মাথায় নিহতের ভাই আশিকুর রহমান হত্যা মামলা নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। হত্যা মামলার আসামি হিসেবে চট্টগ্রামের সরকারদলীয় সাংসদ ও হুইপপুত্র সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া আজ রোববার বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। তবে মামলা গ্রহণ–সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো আদেশ হয়নি বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মাসুদ পারভেজ।
অবশ্য মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর পরদিনই তাঁর বোন নুসরাত জাহান গুলশান থানায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে গুলশান থানা-পুলিশ।
গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের একটি বাসা থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অবশ্য আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার বাদী নুসরাত জাহান আজ রাতে টেলিফোনে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ভাই আশিকুর রহমান একটি মহলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ও খারাপ উদ্দেশে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাটিকে ভিন্ন খাতে নিতে নাজমুল করিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা খুনের মামলার অভিযোগ এনেছেন। প্রকৃতপক্ষে আশিকুর রহমান কোনো কিছুই জানেন না।
নুসরাত আরও দাবি করেন, আশিকুর রহমানের সঙ্গে অনেক আগে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। তাঁর ভাই তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন।
মোসারাত খুন হয়েছেন, দাবি ভাইয়ের
মোসারাতের মৃত্যুর ছয় দিনের মাথায় হঠাৎ করে তাঁর ভাই আশিকুর রহমান ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির হয়ে সাংসদপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরীকে আসামি করে হত্যা মামলা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। আদালতের কাছে আশিকুর দাবি করেন, মোসারাত আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে খুন করা হয়েছে।
মামলা নেওয়ার আবেদনে আশিকুর দাবি করেন, নাজমুল করিমের সঙ্গে তাঁর বোন মোসারাতের পরিচয় হয়। পরে তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা ও দেখা–সাক্ষাৎ হয়। তবে দুঃখের বিষয়, তাঁকে না জানিয়ে তাঁর বোন নুসরাত জাহান ও তাঁর স্বামী মিজানুরের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে গুলশানে বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় মোসারাতকে থাকার নির্দেশনা দেন। সে মোতাবেক মোসারাত সেখানে বসবাস করে আসছিলেন।
মোসারাতের সঙ্গে সায়েম সোবহান আনভীরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। অবশ্য সায়েমের সঙ্গে নাজমুল করিমের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল। নাজমুল করিম তাঁর বোনের মাধ্যমে সায়েম সোবহান আনভীরের ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত অনেক গোপন তথ্য জেনে যান। প্রথম অবস্থায় তাঁর বোন কিছু বুঝে উঠতে পারেননি।
মামলায় আশিকুর আরও দাবি করেন, নাজমুল করিমের অসৎ উদ্দেশ্য প্রথমে ধরতে না পারলেও পরে বিষয়টি বুঝতে পারেন। নাজমুলকে সহযোগিতা করতে অসম্মতি জানান। এতে করে নাজমুল করিম মোসারাতের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন এবং মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁর আরেক বোন (আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার বাদী) নুসরাত জাহানের সঙ্গে আলোচনা করেন। তখন নুসরাত বলেছিলেন, এসব কিছুই হবে না। মোসারাতকে সায়েম সোবহানের বিরুদ্ধে ব্যবহার না করতে পেরে, নাজমুল করিমই তাঁর সহযোগীদের নিয়ে তাঁর বোনকে হত্যা করেছেন।
আশিকুরের দাবি, তাঁর বোন নুসরাত জাহান বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েমের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে কোনো আলোচনা করেননি। নুসরাত প্রকৃত ঘটনা জানেন না।
মামলায় আশিকুরের দাবি, তাঁর বোন মোসারাতকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছেন নাজমুল করিম ও তাঁর সহযোগীরা। ঘটনার দিন নাজমুল করিম তাঁর বোন মোসারাতের ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে ঢুকে অজ্ঞাতনামাদের সাহায্য নিয়ে হত্যা করেন। পরে তাঁর বোনের লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে কৌশলে বাসা থেকে বের হন।
অবশ্য নাজমুল করিম শারুন দাবি করেন, জীবনে কোনো দিন মোসারাতকে সরাসরি দেখেননি। তবে মেসেঞ্জারে কথা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা জঘন্য মিথ্যাচার।
নতুন করে মামলা নেওয়ার আবেদনের বিষয়ে জানতে চেয়ে আশিকুরের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।