যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমেই বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তার ঘটেছে। সংক্রমণের জন্য ৬০ শতাংশ যুক্তরাজ্যের আর ৩০ শতাংশ দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট দায়ী। তবে দেশে এখনো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত না হলেও এটিই তৃতীয় ওয়েভের কারণ হতে পারে বলে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
করোনার নতুন ১০টি জীবন রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইসেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) গবেষকরা। গত এক মাসে করোনা ভাইরাসের নতুন আরও ১০টি জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন তারা। এর মধ্যে ছয়টি যুক্তরাজ্যের এবং ৩টি দক্ষিণ আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট। বাকি একটি অস্ট্রেলিয়ান।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ‘আমরা খুব ভয়ে আছি। এখন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটা যদি আমাদের দেশে আসে তাহলে আমাদের কিন্তু চরম ক্ষতি হবে। তৃতীয় ওয়েভ আরম্ভ হতে পারে।’
গবেষকদের মতে, মার্চ মাস থেকেই বাংলাদেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ হানা দেয়। আক্রান্তের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৃত্যুর হার। তবে করোনার সেকেন্ড ওয়েভে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের কোথাও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়নি। তবে তৃতীয় ওয়েভ প্রতিরোধে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টকে ঠেকানোই মূল চ্যালঞ্জ হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলের প্রধান প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী বলেন, যদি কোয়ারেন্টাইন ঠিকমতো মেইনটেইনেন্স করতে না পারি তাহলে কিন্তু ভারতের ভ্যারিয়েন্টটা তৃতীয় ওয়েভ তৈরি করতে পারে।
প্রথম ও দ্বিতীয়র পর তৃতীয় ওয়েভ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, আমরা যদি প্রস্তুত থাকি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রস্তুত রাখি ইনশাআল্লাহ আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে তা মোকাবিলা করতে পারব।
এর আগে, করোনার নতুন ৮টি জীবন রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি প্রথম ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও আক্রান্ত হওয়াদের নিয়ে গবেষণা করেছেন সিভাসুর গবেষকরা।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ১০টি নমুনার ৬টিতেই যুক্তরাজ্য ধরন (B.1.1.7) ও তিনটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের (B.1.351) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর একটিতে অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ধরন (B.1.1.142) পাওয়া গেছে। তবে কোনো নমুনাতেই ভারতীয় ধরন (B.1.617) এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন বয়সের আক্রান্ত রোগী থেকে নমুনাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচজন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।
এ গবেষণাটি মূলত চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক করা হয়েছে। ১০টি নমুনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত সম্ভবত যুক্তরাজ্যের ধরনের আধিক্য ছিল। যদিও একই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনও ছিল।