আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজত উগ্রপন্থিদের দখলে: ইসলামী ঐক্যজোট

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, শাহ্‌ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলাম উগ্রপন্থিদের দখলে চলে গেছে। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক হেফাজতকে কবজাকারীরা আলেম নামধারী কুচক্রী ও আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থিদের অনুসারী।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই গভর্নর আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সোচ্চার মিছবাহুর রহমান একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে অনিবন্ধিত কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল নিয়ে সরকারের সমর্থনে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স করেন।

universel cardiac hospital

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতাকারী হেফাজত নেতাদের দেশে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে সরকার পতনের লক্ষ্য ছিল বলে দাবি করেছেন মিছবাহুর রহমান চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, জামায়াত-শিবির ও তাদের মিত্রদের শলাপরামর্শে কওমি মাদ্রাসাকে কুক্ষিগত করা এবং হেফাজতের ব্যানারে জ্বালাও-পোড়াও, লুটপাট, হত্যা, নৈরাজ্যের মাধ্যমে সরকার পতনে বিদেশি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করলেও ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি।

আহমদ শহীর মৃত্যুর পর হেফাজতের নেতৃত্বে আসা ব্যক্তিরা উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মিছবাহুর রহমান। তিনি বলেছেন, আলেম নামধারী জামায়াত ও হেফাজতের এক দল লোক হেলিকপ্টারে করে সারাদেশে ওয়াজ ও তাফসির মাহফিলের নামে মিথ্যাচার করেছে। কোরআনের অপব্যাখ্যা দিয়ে যুবসমাজকে জিহাদের কথা বলে উগ্রবাদের দিকে ধাবিত করছে।

সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারবেন না। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন মিছবাহুর রহমান।

তিনি বলেছেন, মাদ্রাসাগুলোকে ঐতিহ্য অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে। এ লক্ষ্যে শায়খুল হাদিস রুহুল আমিনকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী মাসে ঢাকায় ‘ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলন’ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।

হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা মোদির সফরের বিরোধিতা করে গত মার্চে নানা কর্মসূচি পালন করেন। ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে মোদির সফরের প্রতিবাদে মিছিল থেকে সহিংসতা শুরু হয়। হেফাজতের কেন্দ্রস্থল হাটহাজারীতে একই দিনে পুলিশ-থানা আক্রান্ত হয়। চারজনের মৃত্যু হয় গুলিতে। এর পর হেফাজতের ডাকা বিক্ষোভ ও হরতালে তাণ্ডব হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের নানা জায়গায়। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিলুপ্ত কমিটির অন্তত ৩০ নেতাসহ সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

মিছবাহুর রহমান দাবি করেন, কিছু সরলমনা আলেম না বুঝে ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। মোদির সফরের বিরোধিতা করে পথে নেমেছিলেন। তারা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে নজর রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একটি ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম। সেখানে আমন্ত্রণ ছাড়াই হেফাজত নেতা মামুনুল হক গিয়ে উগ্রবাদী বক্তব্য দেন। ওই ঘটনার মামলায় মাহফিলের আয়োজককেও আসামি করা হয়েছে। কিন্তু আয়োজকের দোষ ছিল না। তিনি পরিস্থিতির শিকার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বারিধারার মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ওয়াহিদুজ্জামান, শাব্বির আহমেদ কাসেমী প্রমুখ।

শেয়ার করুন