‘সারা দেশের মাদ্রাসাগুলোতে প্রায় ৪০ লাখ ছাত্র রয়েছে। সব ছাত্রকে একসঙ্গে রাস্তায় নামাতে পারলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। তখন একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আর এ সুযোগে সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
এই অভিপ্রায় থেকেই হেফাজতে ইসলামের নেতাদের পেছনে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে মহলবিশেষ। তাছাড়া হেফাজত নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোর জন্য রয়েছেন ৩১৩ জন স্থায়ী ডোনার।
এসব বিনিয়োগকারী-ডোনারদের টাকায় কোটিপতি হয়েছেন হেফাজতের অনেক নেতা। আর এ টাকার কারণেই কোনো কোনো হেফাজত নেতার নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে।
রিমান্ডে থাকা হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা এসব তথ্য দিয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা সূত্র। আওয়ামী লীগ বিরোধী হেফাজত নেতারা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পেয়েছেন। লন্ডন ও পাকিস্তান থেকেও অর্থ এসেছে।
এসব টাকা কোনো বৈধ চ্যানেলে আসেনি। বেশির ভাগই এসেছে হুন্ডির মাধ্যমে। তাই টাকার প্রকৃত সোর্স বের করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। টাকাগুলো আসে হেফাজত নেতাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে। পরে মাদ্রাসার অ্যাকাউন্টে (যেসব মাদ্রাসার ব্যাংক হিসাব আছে) স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ওই টাকা কীভাবে কোথায় খরচ করা হয় তার কোনো সঠিক হিসাব নেই।
সূত্র মতে, টাকার বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক একাধিক বিয়ে করেছেন গ্রেফতার হওয়া হেফাজত নেতা মাওলানা মামুুনুল হক। ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ ধরা পড়েন তিনি। এরপর বেরিয়ে আসে তার একাধিক কথিত বিয়ের খবর।
এরই মধ্যে মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন কথিত স্ত্রী ঝর্ণা। মামুনুল ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন হেফাজত নেতার নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা বেরিয়ে এসেছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। তারা জানান, মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী (হেলিকপ্টার হুজুর) প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এ ঘটনায় এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন প্রথম স্ত্রী।
মাওলানা হাবিবুল্লাহ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, প্রলোভন দেখিয়ে অন্যের স্ত্রীকে জোর করে বাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন।
গোয়ন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন হেফাজত নেতা জানিয়েছেন, হেফাজতের ভেতর জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের লোকরাও অনুপ্রবেশ করে। তারাই ২০১৩ সালে এবং ২০২১ সালে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। যেসব নেতা টাকা পেয়েছেন তারা প্রচার করে বেড়াতেন- মতবাদ নিয়ে নিজেদের বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু সেই বিরোধকে বড় করে দেখা যাবে না। এখন কোনো বিভেদ তৈরি করা যাবে না। নিজেদের মধ্যে যত মতপার্থক্যই থাকুক না কেন, সব ভুলে যেতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরাতে হবে। এর পর যার যার মতবাদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
সূত্র আরও জানায়, অফিসিয়ালি মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্রদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ছাত্রদের বেশির ভাগের হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা টাকা দিয়েই এসব স্মার্টফোন কেনা হয়। এসব স্মার্টফোনের মাধ্যমে সরকাররিবোধী তৎপরতা চালানো হয়। ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হয়।
- আরও পড়ুন >> ব্যাঙের ছাতার মতো অলিতে-গলিতে এখন আল্লামা!
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকিমশনার (ডিসি) আসাদুজ্জামান বলেন, তিনটি মেয়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা মাওলানা মামুনুল হক স্বীকার করেছেন। আরও যেসব হেফাজত নেতার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে সবগুলো বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সবগুলো ক্ষেত্রেই চুক্তিভিত্তিক বা আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাই এটা স্বাভাবিক বিষয় যে, মোটা অঙ্কের অর্থই তাদের নারীর দিকে ধাবিত করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ইসলামের দোহাই দিলেও এ ক্ষেত্রে ইসলামের নিয়ম তারা অনুসরণ করছে না।
তিনি আরও বলেন, কোমলমতি মাদ্রাসাছাত্রদের হাতে যারা স্মার্টফোন তুলে দিয়েছেন তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এসব স্মার্টফোনের টাকা কোথা থেকে এসেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।