সামনে দেশে বিপদের আশঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেরিঘাটে হাজারো মানুষ
ফাইল ছবি

রাজধানীসহ সারা দেশে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা, রোগী শনাক্ত, মৃত্যু এবং সুস্থ হয়ে ওঠা, সব সূচকই হ্রাস পেয়েছে। এপিডেমিওলজিক্যাল ১৭তম সপ্তাহের (২৫ এপ্রিল-১ মে) তুলনায় ১৮তম সপ্তাহে (২-৮ মে) নমুনা পরীক্ষা ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, শনাক্ত ৩৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, সুস্থতা ২৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং মৃত্যু ৩৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

তবে সব সূচকই হ্রাস পাওয়া স্বস্তির খবর হলেও এ খবরে খুশি নন, বরং চিন্তাগ্রস্ত স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।

universel cardiac hospital

তারা বলছেন, দেশে গত ২৯ মার্চ থেকে শুরু হওয়া লকডাউন বর্তমানে নামকাওয়াস্তে চলছে। ঈদকে সামনে রেখে শপিংমল ও দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শপিংয়ে যাচ্ছে। আন্তঃজেলা ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল করছে। ঈদকে সামনে রেখে নানান ভাবে মানুষ গ্রামের বাড়িতেও ছুটছে। ফেরিতে গাদাগাদি করে মানুষ যাতায়াত করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই।

ফলে আগামী ১-২ সপ্তাহ পর দেশে করোনা সংক্রমণের হার আবারও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, করোনা টিকার সংকট ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। প্রথম ডোজের টিকাদান বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজেরও সংকট রয়েছে। কবে দেশে ফের টিকা পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত নয়। এছাড়া ইতোমধ্যেই দেশে ছয়জন রোগীর দেহে করোনা ভারতীয় ধরন ধরা পড়েছে। ফলে এবার রোগী সংখ্যা বাড়লে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এপিডেমিওলজিক্যাল ১৭ তম সপ্তাহে মোট এক লাখ ৬১ হাজার ২৪২টি নমুনা পরীক্ষা, ১৮ হাজার ১৮৪ জন রোগী শনাক্ত, ৩১ হাজার ৫২০ জন সুস্থ এবং ৫৫৮ জনের মৃত্যু হয়।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৮ তম সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এক লাখ ২৯ হাজার ১৫৮, শনাক্ত ১১ হাজার ৫৪৩ জন, সুস্থ রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ১৬২ এবং মৃত্যু ৩৬৮ জনে নেমে আসে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত ২৯ মার্চ থেকে চলমান লকডাউনসহ নানান উদ্যোগে করোনা সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা কমে এলেও তারা উদ্বেগমুক্ত হতে পারছেন না। সামনে বিপদের আশঙ্কা করছেন।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৯ মার্চ থেকে দুই-তিন সপ্তাহ লকডাউনের ফলে যে সুফল আমরা পেয়েছি, তা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ঈদ শপিং ও বাড়ি ফেরার নামে হাজার হাজার মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। আগামী ১-২ সপ্তাহের মধ্যে তাদের অনেকেই করোনা আক্রান্ত হতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘রাজধানীসহ সারা দেশে সাধারণ ও আইসিইউ এবং আইসিইউ সমমানের বেড বৃদ্ধিসহ করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বাত্মক প্রস্তুতি থাকলেও রোগী সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা দায় হবে।’

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শনিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলাপকালে বলেন, ‘আগামী ১-২ সপ্তাহ পর রোগী বৃদ্ধি পেলে আবার কঠোর লকডাউনে যাবে সরকার।’

আলোচনায় অংশগ্রহণ করে মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘যে পদক্ষেপ রোগী বৃদ্ধির পর নেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, সংক্রমণরোধে তা এ মুহূর্তেই করা উচিত।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এ মুহূর্তে দেশে টিকার সংকট থাকায় মাস্ক পরাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। না হলে সামনে করোনার ভয়াবহ বিপদ আসতে পারে।’

শেয়ার করুন