ডিজিটাল বুথের মনিটরে ক্লিক করলেই মিলবে জমির খতিয়ান। মালিকানা স্বত্বের গুরুত্বপূর্ণ এ সনদ জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে ভূমি মন্ত্রণালয় এ ধরনের সর্বাধুনিক সেবা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুথ স্থাপনসহ এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা দেবে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। ডিসি অফিস এবং শপিংমলসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই বুথ স্থাপন করা হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভূমি ব্যবস্থাপনায় জমির খতিয়ান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জমির মালিকানা প্রমাণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক প্রমাণপত্র। জমি কেনাবেচা ও অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োজন হয়। তাই মাঠপর্যায়ে ভূমি অফিস থেকে খতিয়ান পেতে যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়, সেজন্য উন্নত দেশের মতো ডিজিটাল বুথের মাধ্যমে খতিয়ান সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। যেভাবে বিদেশে ইলেকট্রিক বুথের মাধ্যমে বাস-ট্রেনের টিকিট কাটা হয়, এটিও সম্পন্ন হবে একই পদ্ধতিতে। বুথের মনিটরে নির্ধারিত বাটনে ক্লিক করে প্রথমে নিজ জেলা ও উপজেলা সিলেক্ট করতে হবে।
এরপর মৌজা ও দাগ নম্বর লিখে খতিয়ানের ঘরে চাপ দিলে সংশ্লিষ্ট জমির খতিয়ানের শিট প্রিন্ট হয়ে বের হয়ে আসবে। এজন্য প্রথমে ২০ টাকা দিয়ে বুথের মনিটর ওপেন করতে হবে। অর্থাৎ খতিয়ানপ্রতি এই হারে টাকা নেওয়া হবে। যার মধ্যে ইউসিবি ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ যুক্ত। সম্পূর্ণ ঝামেলামুক্তভাবে যে কেউ তার নিজের জমির খতিয়ান দেশের যে কোনো বুথ থেকে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
জানা গেছে, শিগগিরই এ বিষয়ে ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত চুক্তি সম্পাদিত হবে। এরপর সরকারি পিপিআর (সরকারি ক্রয়বিধি) অনুসরণ করে চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ডিজিটাল খতিয়ান বুথের যাত্রা শুরু হবে বলে আশা করছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
খতিয়ান প্রসঙ্গে একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, এটি হলো জমির দখল স্বত্বের প্রমাণ্যদলিল। এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা রাজস্ব অফিসার কর্তৃক যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয়, তাকে খতিয়ান বলে। প্রতিটি খতিয়ানের পৃথক পরিচিতি নম্বর থাকে। খতিয়ানকে ‘রেকর্ড অব রাইটস’ বা ‘স্বত্বলিপি’ও বলা হয়।
এছাড়া খতিয়ান হচ্ছে নিখুঁত মালিকানা স্বত্ব ও দখলি স্বত্বের প্রমাণপত্র। খতিয়ানে তৌজি নম্বর, জেএল নম্বর, স্বত্বের বিবরণ, মালিকের নাম, পিতার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ থাকে। খতিয়ানের অপর পৃষ্ঠায় দাগ নম্বর, প্রত্যেক দাগের উত্তরসীমা (উত্তর দাগ), ভূমির শ্রেণি, দখলকারের নাম, ভূমির পরিমাণ, হিস্যা এবং হিস্যামতে জমির পরিমাণও লেখা থাকে। উপযুক্ত কোনো আদালত কর্তৃক ভুল প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট খতিয়ান সঠিক বলে বিবেচিত হয়। এসব কারণে ভূমির খতিয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খতিয়ান বা পর্চা ৪ ধরনের হয়ে থাকে। সিএস, এসএ, আরএস খতিয়ান এবং বিএস বা মহানগর জরিপ। ১৮৭৫ থেকে ১৮৮৫ সালের বিটি অ্যাক্টের বিধান মতে, জমিদারদের অধীনে প্রণীত খতিয়ানকে সিএস এবং ‘জমিদারি অধিগ্রহণ প্রজাস্বত্ব আইন-১৯৫০’ এর ভিত্তিতে ১৯৫৬-৬২ সালে একটি জরিপ করা হয়। যার নাম এসএ খতিয়ান।
এছাড়া ১৯৬৫ সাল থেকে পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে সরকার সারা দেশে সংশোধনী জরিপ নামে যে সার্ভে পরিচালনা করে তাকে আরএস খতিয়ান বলে। সর্বশেষ মহানগর জরিপও সম্পন্ন হয়েছে। তবে ডিজিটাল বুথ থেকে সেবাগ্রহীতাকে সংশ্লিষ্ট জমির হালনাগাদ খতিয়ান সরবরাহ করা হবে।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার আওতায় ইতোমধ্যে সাড়ে ৪ কোটি খতিয়ান ডিজিটাল ডেটাশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি নামজারিসহ খতিয়ান অন্তর্ভুক্তির কাজও এগিয়ে চলছে। খতিয়ানের সঙ্গে জমির নামজারির বিষয়টিও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নামজারি বা মিউটেশন ২ ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত, মূল খতিয়ানে নাম কর্তন করে ভূমি কিংবা কারও নাম যুক্ত করে নামজারি করা। দ্বিতীয়ত, কোনো খতিয়ানের কোনো অংশীদার বা নতুন মালিক খতিয়ান হতে বের হয়ে বা খারিজ হয়ে স্বতন্ত্র খতিয়ান খুলতে চাইলে জমা ভাগ করে স্বতন্ত্র খতিয়ান খুলে নামজারি করা হয়।