ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা
ফাইল ছবি

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। গত সোমবার থেকে অব্যাহত ইসরায়েলের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ১৬ শিশুসহ ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ৮৬ শিশু ও ৩৯ নারীসহ গুরুতর আহত হয়েছেন ৩৬৫ জন। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। খবর : আল জাজিরার।

এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও ৩৩৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। গাজার পুলিশ সদরদফতর ও নিরাপত্তা ভবনে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

অপরদিকে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখার রকেট হামলায় অন্তত শিশুসহ ছয়জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি সৈন্য রয়েছেন। এছাড়া হামাসের হামলায় অন্তত ১০০ জন ইসরায়েলি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে প্রায় দেড় হাজার রকেট হামলা চালিয়েছে গাজা।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আরব-সংখ্যাগরিষ্ঠ লড শহরে অবস্থিত আল-নূর মসজিদে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলিরা। এই শহরে জরুরি অবস্থা জারি করেছে ইসরায়েল সরকার। লড শহরে বসবাসরত ৭৭ হাজার জনগণের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি।

এদিকে বিমান হামলা চালিয়ে গাজার একটি বহুতল ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা শহর থেকে সাংবাদিক ইয়ামনা আল সাঈদ আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। নগরীর ১৪ তলা বিশিষ্ট শরওক টাওয়ারে বেশ কয়েকটি মিডিয়া অফিস ছিল। এটি গাজা উপত্যকার খুব ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল।

অবিলম্বে ফিলিস্তিনে সব ধরনের দমনমূলক কার্যক্রম থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। আর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বিরত থাকতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন।

এদিকে, গাজা উপত্যকায় এই হামলা-আক্রমণ বন্ধের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামলা অব্যাহত রাখবে এবং দীর্ঘমেয়াদে পূর্ণ নীরবতা নিয়ে আসবে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেছেন, যুদ্ধ আরও তীব্র হবে বলে মনে করছেন তিনি।

গত ১০ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে গাজা উপত্যকায় সিরিজ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী। হামলার প্রথম দিনে তিন শিশুসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়। দ্বিতীয় দিনে তা বেড়ে ২৮ জনে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী এবং শেখ জাররাহ এলাকায় অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের উত্তেজনা চলছিল। এর মধ্যে আল-আকসা মসজিদে ঢুকে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালায়।

পবিত্র রমজানের জুমাতুল বিদা এবং পবিত্র রাত শবে কদরেও আল-আকসায় তাণ্ডব চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা এর প্রতিবাদ করে আসছেন। এর মধ্যেই গত সোমবার প্রতিশোধ হিসেবে হামাস ইসরায়েলে দিকে রকেট হামলা চালায়। তারপর থেকে অব্যাহত বিমান হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।

এর আগে সোমবার ভোররাত থেকে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ঢুকে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর তাণ্ডব চালায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী। এতে বহু ফিলিস্তিনি আহত হয়। এসময় ফিলিস্তিনিদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি পুলিশ ও সেনারা।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও জেরুজালেমে ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বুধবার তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে জেরুজালেম, গাজা ও আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইসরায়েলকে থামাতে এবং ‘পাল্টা শিক্ষা’ দিতে হবে।

শেয়ার করুন