গত কয়েক দশক ধরে নিজেদের মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত ও নিজভূমে পরাধীন ফিলিস্তিনিদের বুক থেকে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যে সংঘাত চলে আসছে, তার অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে মানা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ যেটি ইসরায়েলের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। তবে এই দুই দেশ কৌশলগত মৈত্রীতে আবদ্ধ হওয়ায় দেশ দুটির সরকার বদল হয়ে নতুন নেতা আসলেও তাদের কৌশলগত আঁতাতের কোনো পরিবর্তন হয় না। যার ফলে কট্টরপন্থী অনারব ইহুদিদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সেখানকার আদি আরব জনগোষ্ঠী (ফিলিস্তিনিরা), যাদের মধ্যে রয়েছে- মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মের অনুসারী মানুষ। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে দুই টুকরো করে দুটি পৃথক ইহুদী এবং আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। তবে জাতিসংঘের এই পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি।
১৫ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে আলজিয়ার্স শহরে নির্বাসনে ঘোষিত একটি রাষ্ট্র, যেখানে ফিলিস্তিন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) ও ফিলিস্তিন জাতীয় পরিষদ (পিএনসি) একপক্ষীয় ভাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যদিও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম ছিল না। এটা ছিল ফিলিস্তিনে বসবাসরত আরব জনগোষ্ঠীর নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম (যেখানে রয়েছেন মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠি)। ১৯৮৮ ঘোষণার সময়ে কোনো অঞ্চলেই পিএলওর নিয়ন্ত্রণ ছিল না, এমনকি তারা যে অঞ্চলগুলো দাবি করেছিল, বাস্তবে সেগুলো ইসরায়েলের দখলে ছিল। আরবরা দাবি করেছিল, ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ দ্বারা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন বিভাগ যেভাবে প্রস্তাবিত হয়েছিল, যেখানে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড (গাজা ভূখণ্ড ও ওয়েস্ট ব্যাংক) ছাড়াও ইসরায়েল শাসনাধীন অঞ্চলও ছিল এর অন্তর্ভুক্ত এবং জেরুজালেমকে ঘোষিত রাষ্ট্রের রাজধানী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদে মুসল্লীদের নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ফের নতুন করে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে তারা সামরিক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে, যা নিঃসন্দেহে গণহত্যার শামিল। আমরা এধরনের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, ইসরায়েলের এই মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর ভূমিকা নেওয়া উচিত। একইসঙ্গে ১৯৬৭ সালের আরব – ইসরায়েল যুদ্ধের আগের সীমান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিনি শরণার্থী সমস্যার সমাধান, স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমকে স্বীকৃতির মাধ্যমে স্থায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত। কেননা দ্বি-রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হলেই এই অঞ্চলে ফিরবে প্রকৃত শান্তির হাওয়া।