ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের উপর্যুপরি হামলা ও বেসামরিক মানুষ হত্যার নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম দেশগুলোর জোট ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। এছাড়া, ফিলিস্তিনিদের জন্য অন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে কিছু বলেনি সংস্থাটি।
সৌদি আরবের উদ্যোগে রোববার তুরস্ক, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ইসরায়েলের নৃশংস আগ্রাসনের কঠোর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় সংস্থাটি। একই সঙ্গে জাতিসংঘ সনদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ইসরায়েলকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ ও দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানায় ওআইসি। সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স, বিবিসি ও আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ, তাদের ভূমি ও পবিত্র স্থানের ওপর দখলদার ইসরায়েলের বর্বর হামলার কড়া নিন্দা জানাচ্ছে ওআইসি। একইসঙ্গে নিরাপরাধ বেসামরিক নাগরিক ও তাদের সম্পত্তির ওপর চালানো হামলা দ্রুত ও পুরোপুরি বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও ফিলিস্তিন প্রশ্নে জাতিসংঘের প্রস্তাবের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।
এতে আরও বলা হয়েছে, ওআইসি সতর্ক করছে যে, ‘এই হামলা ও উস্কানির ধারাবাহিকতা নিরীহ বেসামরিক মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ, যা তাদের জন্য মারাত্মক ভোগান্তির সৃষ্টি করে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে এবং এই অঞ্চলে ও এর বাইরে নিরাপত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।’
বিবৃতিতে আল-আকসা মসজিদসহ সব পবিত্র এলাকাগুলো অবমাননা বন্ধসহ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বন্ধের দাবিও জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা না হলেও বৈঠকে সৌদি আরব ও তুরস্ক ইসরায়েলকে থামাতে আন্তর্জাতিক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান ও ফিলিস্তিনে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছে।
বৈঠকে শুরুতে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান ফিলিস্তিনে হামলার জন্য ইসরায়েলের নিন্দা জানান। পাশাপাশি সামরিক হামলা বন্ধের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও তাদের উপর ইসরায়েলের হামলাকে ‘আরব, মুসলমান এবং আন্তর্জাতিক নিয়মের ওপর হামলা’ বলে আখ্যা দেন।
ইসরায়েলের আচরণ বর্ণবাদী উল্লেখ করে আল-মালিকি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ ইসরায়েলের বর্ণবাদের শিকার হচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনিদের দেশ ও অধিকার উপড়ে ফেলছে।’
ভার্চুয়াল সভায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু ফিলিস্তিনে আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এটি দায়িত্ব ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করা। আর এক্ষেত্রে ওআইসি, জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতায় যতজনের প্রাণহানি ঘটেছে তাদের মধ্যে অর্ধেকেই শিশু ও নারী। এবার ইসরায়েলি বাহিনী গণমাধ্যম কর্মীদের প্রাণনাশের দিকে ঝুঁকছেন।
সভা শেষে মেভলুত চাভুসোগলু টুইট করে বলেছেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা সমস্ত প্রচেষ্টা দৃঢ়তার সঙ্গে চালিয়ে যাব।’এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে শিক্ষা দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রকেট হামলার প্রেক্ষিতে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এই সংঘাতের এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে তুরস্কের আহ্বানে প্রথমবারের মতো আজ রবিবার জরুরি বৈঠকে বসে ৫৭ সদস্য দেশের জোট ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা।
এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৩ শিশুসহ আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রবিবার ভোরের আগে গাজা শহরের কেন্দ্রে ঘুমন্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা করে ইসরায়েল। এ নিয়ে টানা সপ্তম দিনের হামলায় গাজা উপত্যকা এখন বিধ্বস্ত।
ইসরায়েলের এই হামলায় ৫২ শিশুসহ গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮১ জনে। এছাড়া গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। এদিকে হামাসের ছোড়া রকেটে ইসরায়েলে দুই শিশুসহ ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।