চট্টগ্রামে ৫ বছর আগে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যার প্রধান আসামি তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের দুই সন্তানের খোঁজে নেমেছে পুলিশ।
মিতু হত্যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তাদের ছেলে। ঘটনার দিন চট্টগ্রামে জিইসির মোড়ে তার সামনেই মাকে কুপিয়ে হত্যা করে খুনিরা। সে সময় তার বয়স ছিল ৭। মাকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টাও করে সে। কিন্তু তখন ‘হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া’ বাবুলের সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা তাকে জড়িয়ে ধরে রাখায় ব্যর্থ হয় সে।
গ্রেফতার দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই ঘটনাটি উঠে আসে।
বিষয়টি আমলে নিয়ে মিতু-বাবুলের দুই সন্তানের খোঁজে নেমেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু এখনও তাদের সন্ধান মেলেনি।
কারণ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআইকে ভুল ঠিকানা দিয়েছিলেন বাবুল। নিহত মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা করেছেন, সেখানেও বাবুল আকতারের ঢাকার ঠিকানা ভুলভাবে লেখা হয়েছে।
এ বিষয়ে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন জানিয়েছিলেন, বাবুল আকতার পিবিআইকে যে ঠিকানা দিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই মামলায় ওই ঠিকানা লিখেছেন তিনি।
শুক্রবার পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন, সন্তানদের এসব ঝামেলা থেকে সরিয়ে রাখতেই এ কাজটি করেছেন বাবুল। তারা যেন পুলিশের হাতে না আসে।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, বাবুল আকতারের বাসার ঠিকানা লেভেল-৭, সড়ক নম্বর ১১, বাসা নম্বর ২২, ব্লক সি, বাবর রোড। কিন্তু মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে এই হোল্ডিং নম্বরের বাসার অস্তিত্বই পায়নি পুলিশ।
পরে পুলিশি জেরায় বাবুলের মুখ থেকে সঠিক ঠিকানা নিয়ে সেখানে গেলেও তার সন্তানদের পায়নি পুলিশ। ওই এপার্টমেন্টের নিরাপত্তা রক্ষী মো. রিপন জানায়, বাবুলকে গ্রেফতারের দিনই তার নতুন স্ত্রী আগের ঘরের দুই সন্তানকে নিয়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে গিয়েছেন।
এই অবস্থায় দুই সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাদের নানা মোশাররফ হোসেন। এমন পরিস্থিতিতে মিতু-বাবুলের দুই সন্তানকে নিজেদের কাছে রাখতে চান বলে জানান মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। নাতি-নাতনিকে নিজেদের জিম্মায় চেয়ে রোববার আদালতে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু নাতি-নাতনি কোথায় তা তিনি জানেন না। পুলিশও দিতে পারছেন না খোঁজ।
এ বিষয়ে মোশাররফ হোসেন শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মা মারা যাওয়ার পর তারা আমাদের বাসায় ছিল। পরে বাবুল তাদের নিয়ে যায়। এখন বাবাও পুলিশের হাতে গ্রেফতার। তাদের দেখাশোনার জন্য বিশ্বস্ত কেউ নেই। আমরা নানা-নানি তাদের দেখাশোনা করব।’
মিতুর দুই সন্তান এখন কোথায় সে প্রশ্নে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল ভুল ঠিকানা দিয়েছিল। পরে আবারও জেরার মুখে আসল ঠিকানা দেয়। আমরা সেই বাসায় লোক পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে কেউ নেই। তাদের খোঁজা হচ্ছে। দুই-একদিনের মধ্যেই তাদের অবস্থান জানতে পারব।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ঢাকায় অবস্থান করা মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে নিজের জঙ্গি-বিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তবে পুলিশ তদন্তে তার সম্পৃক্ততার গুঞ্জন ছিল আগে থেকেই। মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন তার মামলায় অভিযোগ করেন, মিতু পরকীয়ায় বাধা হওয়ায় তাকে খুন করেন বাবুল।
পাঁচ বছর পর স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামি হয়ে রিমান্ডে আছেন বাবুল।