শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

আজ (১৭ মে) আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৮১ সালের ১৬ মে শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে একটি ফ্লাইটে কলকাতা পৌঁছান। ১৭ মে বিকেলে কলকাতা থেকে ফেরেন ঢাকায়। সেদিন ছিল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জনতার ঢল নেমেছিল তেজগাঁও বিমানবন্দরে। জননেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে আসেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, যুবা-ছাত্র। সেদিন দেশের মানুষ জেগে উঠেছিল। পঁচাত্তরের পর বাঙালির জীবনে যে অন্ধকার নেমে আসে, তা কেটে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। বাংলার মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখে।

মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আয়োজিত লাখো জনতার উপস্থিতিতে এক সমাবেশে সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’

universel cardiac hospital

এদিকে ওই সময় দেশে সামরিক শাসন চলছিল। এর মাঝে শেখ হাসিনার স্বদেশে ফেরা ছিল একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। এছাড়া তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করা হয়। এমনকি ১৯৮১ সালে ‘শেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি’ পর্যন্ত করানো হয়েছিল। তবে দেশের মানুষ কখনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ভুলেনি। তিনি যেমন আজীন মানুষকে ভালোবেসেছেন, মানুষও তাঁকে বুকে ধারণ করে চলেছে। আর এমন অবস্থায় পিছু হটতে বাধ্য হয় কুচক্রীমহল। ১৯৮১ সালের ১৭ মে সকল পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছিল– ‘শেখ হাসিনা আগমন প্রতিরোধ কমিটি আপাতত তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে’।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল তার দল আওয়ামী লীগ। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হন দলের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলও প্রকট আকার ধারণ করে। দ্বিধা বিভক্ত ও ব্র্যাকেট বন্দি হয়ে পড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এ প্রাচীন দলটি। এই পেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক সংগ্রামী জীবন।

১৯৭৫ সালের মর্মান্তিক ঘটনার পর দীর্ঘ নির্বাসন শেষে দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা ৪ দশক ধরে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগকে। সেই সঙ্গে তার যোগ্য নেতৃত্বে চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দলটি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে এই দীর্ঘ সময় দলের প্রধানের দায়িত্বে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। নানা চড়াই-উৎড়াই, কারাবরণ, মৃত্যুর মুখোমুখী হওয়াসহ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই সময়ের শাসন আমলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলেই চলতি বছর বাংলাদেশ স্বল্পন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণ করে চলেছেন। চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের এই ক্রান্তিকালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যেখানে করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে সেখানে শেখ হাসিনার পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ ভালো আছে।

শেখ হাসিনা একজন আত্মপ্রত্যয়ী, মানবতাবাদী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের অধিকারী। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি খুবই ঋদ্ধ। ভালোবাসায় ও সহমর্মিতায় তিনি সবার কাছে প্রিয় এবং দেশবাসীর অতি আপনজন। তাঁর দেখানো পথেই উন্নত ও সমৃদ্ধ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার দিকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছে বাংলাদেশ।

লেখক: সংসদ সদস্য, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা,
পঁচাত্তর-পরবর্তী প্রতিরোধ যোদ্ধা,
সম্পাদক, মত ও পথ।

শেয়ার করুন