রাজধানীর পল্লবীতে প্রকাশ্যে ছেলের সামনে শাহীন উদ্দিন (৩৩) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার মামলার এক নম্বর আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ শুক্রবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি তার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভৈরব এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি এম এ আউয়ালকে গ্রেফতার করে র্যাব। এদিকে শাহীন উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যার মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ নম্বর আসামি মো. মানিক র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
গত ১৬ মে বিকেলে জমির বিরোধের মীমাংসার কথা বলে শাহীন উদ্দিনকে পল্লবী থানার ডি-ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আকলিমা বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৭ মে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৬ মে বিকেল ৪টার দিকে সুমন ও টিটু নামের দুই যুবক শাহীন উদ্দিনকে জমির বিরোধ মেটানো হবে জানিয়ে ফোন করে ডেকে নেন। শাহীন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে গেলে, সুমন ও টিটুসহ ১৪-১৫ জন মিলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যান। এ সময় শাহীনের ছয় বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে ছিল। গ্যারেজে ঢুকিয়ে শাহীনকে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা। এরপর তাকে ওই গ্যারেজ থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে আবার কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যান। ঘটনাস্থলেই শাহীনের মৃত্যু হয়।
আকলিমার অভিযোগ, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেডের এমডি এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা শাহীনকে হত্যা করেছে। আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি জবরদখলে বাধা দেয়ায় তাকে খুন করা হয়।
মামলার প্রধান আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল। অন্য আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন, মো. আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, মনির, শফিক, টিটু, কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, আবদুর রাজ্জাক, মরন আলী, লিটন, আবুল, বাইট্যা বাবু, বড় শফিক, কালু ওরফে কালা বাবু, নাটা সুমন ও ইয়াবা বাবু। আসামিরা সবাই পল্লবী থানা এলাকার বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) সকালে ভৈরব এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আউয়ালকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এছাড়া এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মো. সুমন বেপারী (৩৩) এবং মো. রকি তালুকদারকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, ঘটনার চার-পাঁচদিন আগে মূল পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও মামলার প্রধান আসামি আউয়ালের কলাবাগান অফিসে ২ নম্বর আসামি আবু তাহের ও ৩ নম্বর আসামি সুমন হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সুমনকে। সুমনের নেতৃত্বে প্রায় ১০-১২ জন কিলিং মিশনে অংশ নেয়।
মীমাংসার কথা বলে আগে থেকেই শাহীনকে ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয়েছিল। প্রথমে সুমন, মনির, মানিক, হাসান, ইকবাল ও মুরাদসহ ১০-১২ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাহীনকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ঘটনার শেষ পর্যায়ে শরীরের ওপরের অংশে মনির এবং হাঁটু ও হাত-পায়ে কুপিয়ে মানিক শাহীনের মৃত্যু নিশ্চিত করে। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সাবেক এমপি আউয়ালের মোবাইলে ফোন করে সুমন বলেন, ‘স্যার ফিনিশড।’ এরপর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় গা ঢাকা দেয়।