সন্তানের সামনে বাবাকে কোপানো মনির ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্দুক যুদ্ধ
ফাইল ছবি

রাজধানীর পল্লবীতে নিজ সন্তানের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি মো. মনির বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, শাহীনের ঘাড়ে একের পর এক কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে মনির।

রোববার সকালে গোয়েন্দা মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

universel cardiac hospital

তিনি বলেন, রাত আড়াইটার দিকে পল্লবীর সাগুফতা হাউজিং এলাকায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের একটি জোনাল টিমের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে গুরুতর আহত হয় মো. মনির। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশের দুজন সদস্য আহত হয়েছেন।

পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) বুলবুল বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাদের একটি টিম এখন অবস্থান করছে। নিহতের সুরতহাল তৈরি করছে। বন্দুকযুদ্ধের বিষয়ে বিস্তারিত আরও পরে জানানো হবে বলেও তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, নিহত মনির পল্লবীর চাঞ্চল্যকর শাহীন উদ্দিন হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি। হত্যাকাণ্ডের সে সরাসরি জড়িত ছিল।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) দিবাগত রাতে পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় ওই মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ নম্বর আসামি মো. মানিক র‍্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

গত ১৬ মে বিকেলে জমির বিরোধের মীমাংসার কথা বলে শাহীন উদ্দিনকে পল্লবী থানার ডি-ব্লকের একটি গ্যারেজের ভেতর নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা আকলিমা বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৭ মে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৬ মে বিকেল ৪টার দিকে সুমন ও টিটু নামের দুই যুবক শাহীন উদ্দিনকে জমির বিরোধ মেটানো হবে জানিয়ে ফোন করে ডেকে নেন। শাহীন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে গেলে, সুমন ও টিটুসহ ১৪-১৫ জন মিলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যান। এ সময় শাহীনের ছয় বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে ছিল। গ্যারেজে ঢুকিয়ে শাহীনকে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা। এরপর তাকে ওই গ্যারেজ থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে আবার কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যান। ঘটনাস্থলেই শাহীনের মৃত্যু হয়।

আকলিমার অভিযোগ, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেডের এমডি এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এম এ আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা শাহীনকে হত্যা করেছে। আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি জবরদখলে বাধা দেয়ায় তাকে খুন করা হয়।

মামলার প্রধান আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল। অন্য আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন, মো. আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, মনির, শফিক, টিটু, কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, আবদুর রাজ্জাক, মরণ আলী, লিটন, আবুল, বাইট্যা বাবু, বড় শফিক, কালু ওরফে কালা বাবু, নাটা সুমন ও ইয়াবা বাবু। আসামিরা সবাই পল্লবী থানা এলাকার বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার (২০ মে) সকালে ভৈরব এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আউয়ালকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এছাড়া এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মো. সুমন বেপারী (৩৩) এবং মো. রকি তালুকদারকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‍্যাব বলছে, ঘটনার চার-পাঁচদিন আগে মূল পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও মামলার প্রধান আসামি আউয়ালের কলাবাগান অফিসে ২ নম্বর আসামি আবু তাহের ও ৩ নম্বর আসামি সুমন হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সুমনকে। সুমনের নেতৃত্বে প্রায় ১০-১২ জন কিলিং মিশনে অংশ নেয়।

মীমাংসার কথা বলে আগে থেকেই শাহীনকে ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয়েছিল। প্রথমে সুমন, মনির, মানিক, হাসান, ইকবাল ও মুরাদসহ ১০-১২ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাহীনকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ঘটনার শেষ পর্যায়ে শরীরের ওপরের অংশে মনির এবং হাঁটু ও হাত-পায়ে কুপিয়ে মানিক শাহীনের মৃত্যু নিশ্চিত করে।

শেয়ার করুন