বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং মত ও পথ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।।
আজ মঙ্গলবার এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী ছিলেন একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি ও ঔপন্যাসিক। তাঁর সঙ্গে আমার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তিনি আমাদের চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজের একটি প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি কবিতা, উপন্যাস ও কর্মে মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রগতিশীলতাকে সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন, যা পাঠক মহলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মৃত্যুর সংবাদ আমাকে গভীরভাবে শোকাহত করেছে। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী সোমবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
গত ফেব্রুয়ারিতে অসুস্থ হয়ে হাবীবুল্লাহ সিরাজী হাসপাতালে ভর্তি হলে তার হার্টে রিং পরানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। পেটে ব্যথা হলে গত ২৫ এপ্রিল তাকে শ্যামলীর এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এতদিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
২০১৮ সাল থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী বহু কাব্যগন্থ ও উপন্যাসের রচয়িতা। তার কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’, ‘মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি’, ‘হাওয়া কলে জোড়াগাড়ি’, ‘নোনা জলে বুনো সংসার’, ‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’, ‘আমার একজনই বন্ধু’, ‘পোশাক বদলের পালা’, ‘প্রেমের কবিতা’, ‘কৃষ্ণ কৃপাণ ও অন্যান্য কবিতা’, ‘সিংহদরজা’, ‘বেদনার চল্লিশ আঙুল’, ‘ম্লান, ম্রিয়মাণ নয়’, ‘বিপ্লব বসত করে ঘরে’, ‘ছিন্নভিন্ন অপরাহ্ণ’, ‘জয় বাংলা বলো রে ভাই’, ‘সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না’, ‘সুগন্ধ ময়ূর লো’, ‘নির্বাচিত কবিতা’, ‘মুখোমুখি: তুচ্ছ’, ‘স্বনির্বাচিত প্রেমের কবিতা’, ‘হ্রী’, ‘কতো আছে জলছত্র’, ‘কতোদূর চেরাপুঞ্জি’, ‘কাদামাখা পা’, ‘ভুলের কোনো শুদ্ধ বানান নেই’, ‘একা ও করুণা’, ‘যমজ প্রণালী’, ‘আমার জ্যামিতি’, ‘পশ্চিমের গুপ্তচর’ ও ‘কবিতাসমগ্র’।
তার উপন্যাসগুলো হচেছ – ‘কৃষ্ণপক্ষে অগ্নিকাণ্ড’, ‘পরাজয়’, অনুবাদ ‘মৌলানার মন: রুমীর কবিতা’, আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘আমার কুমার’, গদ্যগ্রন্থ ‘দ্বিতীয় পাঠ’, ‘মিশ্রমিল’, ‘গদ্যের গন্ধগোকুল’, শিশুসাহিত্য ‘ইল্লিবিল্লি’, ‘নাইপাই’, ‘রাজা হটপট’, ‘ফুঁ’, ‘ফুড়ুত্’, ‘মেঘভ্রমণ’, ‘ছয় লাইনের ভূত’ ও ‘ছড়াপদ্য’।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৭ সালে বিষ্ণু দে পুরস্কার, ২০১০ সালে রূপসী বাংলা পুরস্কার এবং কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৬ সালে একুশে পদকসহ দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।