সবকিছু অনুকূলে থাকলে আজ বুধবার হালদায় ডিম ছাড়বে মা মাছ। মঙ্গলবার মধ্যরাতে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক এই মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, হালদায় মা মাছ পরীক্ষামূলক ডিম ছেড়েছে। পরিবেশ অনুকূল মনে হলে ভাটার সময় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। আবার পরিবেশ অনুকূলে না হলে নাও ছাড়তে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হালদা গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদায় আধঘণ্টা আগে বেশ কিছু স্থানে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ছে। মা মাছ যদি পরিবেশ অনুকূল অর্থাৎ ডিম ফুটাতে পারবে মনে করে তাহলে সকালের ভাটায় ডিম ছাড়বে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় হালদায় ডিম না ছাড়ার কথা গবেষণায় উল্লেখ থাকলেও কেন ছেড়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মানে হলো- নদীতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েনি।
হালদায় ডিম ধরার দীর্ঘ ৪০ বছরের অভিজ্ঞ জেলে আশু বড়ুয়া বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমরা অল্প করে নমুনা ডিম সংগ্রহ করলাম। আমাদের বাপ-দাদার অভিজ্ঞতায় বলে- নমুনা ডিম জোয়ারে ছাড়লে পরের ভাটায় পুরোপুরি ডিম ছাড়ে। আবার নমুনা ডিম ভাটায় ছাড়লে পরের জোয়ারে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে পরিবেশ অনুকূলে না হলে পরের জোয়ারে বা ভাটায় ডিম না ছেড়ে মা মাছে আরেকটি জো’র অপেক্ষা করে।
জানা গেছে, বছরের এপ্রিল থেকে জুনের যেকোনো সময় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে- পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথি বা জো থাকতে হবে। একই সময়ে নদীর স্থানীয় এবং খাগড়াছড়ি, মানিকছড়িসহ নদীর উজানে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে হবে। ফলে পাহাড়ি ঢল নামবে এবং নদীতে ফেনাসহ পানি প্রবাহিত হবে। ঠিক এ সময়ে পূর্ণ জোয়ার শেষে অথবা পূর্ণ ভাটা শেষে পানি যখন স্থির হয় তখনই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা গবেষকরা জানিয়েছেন, এ বছরের এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার পরে এরই মধ্যে তিনটি জো চলে গেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় নদীতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই মা মাছ ডিম ছাড়েনি। গতকাল (সোমবার) থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমার জো। এটি ২৮ মে পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
এরই মধ্যে জোয়ারের সময় মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আজ (বুধবার) সকালে ভাটার সময় ডিম ছাড়তে পারে।