ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর গতিপথ পাল্টে যাওয়ায় বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে দেশের উপকূলীয় নয় জেলার ২৭ উপজেলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সার্বিক ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এই তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর। এর মধ্যে ভোলার লালমোহন উপজেলায় গাছচাপায় আবু তাহের (৪৯) নামে একজন মারা গেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, শরণখোলা, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, মঠবাড়িয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, চরফ্যাশন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা সদর, হাতিয়া, রামগতি ও কমলনগর।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলে তিন থেকে ছয় ফুটের অধিক জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে উপকূলের বেশকিছু জেলা প্লাবিত হতে পারে।
ইতিমধ্যে ভারতের ওড়িশা উপকূলে প্রবল বেগে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নর্থ ধামড়ায় ঝড়ের অগ্রভাগ আঘাত হানে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে আছড়ে পড়েছে ইয়াস। সমুদ্রে প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। ইয়াসের আঘাতে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ঝড়টির গতিপথ ভারতের দিকে থাকায় বাংলাদেশের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশের উপকূল থেকে দূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। যা আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ ওড়িশার ডামরার উত্তর এবং বালাশশারের দক্ষিণ দিক দিয়ে ভারতের উত্তর ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। ঝড়ের প্রভাবে ইতিমধ্যে ওড়িশা উপকূলে ছয় ফুটের অধিক জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে উপকূলের বিস্ত্রীর্ণ অঞ্চল। শত শত ঘরবাড়ি ও গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ।