বরগুনায় পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার

বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনা

বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। স্বল্প উচ্চতা ও ভাঙা বেড়িবাঁধই এ দুর্ভোগের কারণ বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি নদীর জোয়ারের লবন পানি কৃষি জমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার মানুষ খাবার পানি সংঙ্কটে রয়েছেন।

বুধবার সকাল ৮টার দিকে উপকূলীয় নদ-নদীতে জোয়ার শুরু হয়ে চলে টানা দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এ সময় বরগুনার নদ-নদীতে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। এতে আতঙ্কে রয়েছেন ঐসব এলাকার ভাঙন কবলিত বাসিন্দারা।

বেলা ১১টার দিকে তালতলী উপজেলার খোট্টার চর, বড়অঙ্কুজানপাড়া, ছোটভাইজোড়া, তেতুলবাড়িয়া, নিশানবাড়িয়া, নলবুনিয়া বেড়িবাঁধ ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে বাড়িঘর, দোকানপাট, টিউবওয়ল প্লাবিত হয়েছে।

স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকের দুপুরের রান্না হয়নি। বেড়িবাঁধের বাইরে ঘরবাড়িতে দেখা দিয়েছে খাবারপানি সংকট। লবন পানিতে দেখা দিতে পারে পানিবাহিত রোগ। তীরের বাঁধের একটা অংশ ভেঙে নদীর লবনাক্ত পানি ঢুকে বাড়ির আঙিনাসহ তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। চাষিদের ফসলের চরম ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা একটি সরকারি আবাসন এলাকা সম্পূর্ণ তলিয়ে গেলে ওখানকার মানুষদের সরিয়ে আশ্রয়ন কেন্দ্রে নিচ্ছে সিপিপি সদস্যরা। পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপদে যাওয়ার জন্য চালানো হচ্ছে প্রচারকাজ।

সোনাকাটা এলাকার স্থানীয় বেলাল হোসেন ফারাবী বলেন, পূর্ণিমার জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রাভাবে এ এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। পড়েছে খাবারপানি সংকট। শঙ্কা রয়েছে পানিবাহিত রোগের। এখানকার প্রায় ১০ থেকে ১২টি গ্রামের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। তাদের দুপুরের রান্না হয়নি। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।

ছোটভাইজোড়া আবাসন এলাকার মল্লিক মো. জামাল বলেন, জোয়ারের পানিতে এই এলাকার অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। টিউবওয়েল পানিতে ঢুবে যাওয়াতে পড়েছে খাবারপানি সংকট।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কাওসার হোসেন বলেন, যারা পানিবন্দি রয়েছে তাদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব দ্রুত তাদের মাঝে এসব খাবার বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি নিরাপদ পানির ব্যবস্থাও করা হবে।

তিনি বলেন, রাতের জন্য প্রতিটি আশ্রয়ন কেন্দ্রে খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় বরগুনা জেলার ছয়টি উপজেলায় ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। দুর্যোগকালীন এবং পরবর্তী সময় চিকিৎসা সেবায় ৪৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী সহায়তার জন্য ইতোমধ্যেই জেলার ৪২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় ১১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে শিশুখাদ্য ছয় লাখ ও গোখাদ্যের জন্য ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা ও ৩৫৭ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। সাড়ে সাত হাজার স্বেচ্ছাসেবী ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন।

শেয়ার করুন