ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের দুই মাস পরও মূল অপরাধীদের গ্রেফতার না করায় এবং হেফাজত নেতা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহকল প্রধান আসামি করে স্থানীয় সাংসদ উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর দায়ের মামলা নথিভুক্ত করতে গড়িমসি করার প্রতিবাদে কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ ও সচেতন নাগরিক সমাজ।
তাণ্ডবের উসকানি দাতা মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহসহ মূল অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিতে তারা আগামী ১ জুন সকাল ১১ টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের সামনে মানববন্ধন এবং ২ জুন থেকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
বুধবার (২৬ মে) রাতে পৃথক দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল এবং সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ব্রাহ্মণবাড়িয়া তে হেফাজতের তান্ডবের সাথে জড়িত মূলহোতারা আজ ও গ্রেফতার হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির রাজধানী ব্রাহ্মণবাড়িয়া কে পিছিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসীর সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে এদের মধ্যে কয়েকজন চুনোপুঁটি কে গ্রেফতার করা হলেও তাদের মূলহোতা রাঘব বোয়াল সাজিদুর রহমান এবং মোবারক উল্লাহ কে গ্রেফতার করতে সম্পূর্ণ রুপে ব্যর্থ হয়েছে। তারা কারণ হিসাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের কাছে ব্যাখা দিয়েছিলো, হেফাজতের তান্ডবের মামলায়, তারা এজহার ভুক্ত আসামী নয়। পক্ষান্তরে যখন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসীর দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনপ্রতিনিধি, হামলার নির্দেশ দাতা দের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ পত্র দাখিল করার পর ও সেইটি কে এজাহার ভুক্ত না করায় এতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ সংকিত ও ক্ষুব্ধ। তাই আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাত্র সমাজ মনে করি এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার। মূলহোতাদের যদি আইনের আওতায় আনা না হয় অতীতের ন্যায় এইরকম তান্ডব ভবিষ্যৎ এ ও পুনরাবৃত্তি হবে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে এইরকম তান্ডবলীলা থেকে রক্ষা করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্প সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত রাখতে, সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান গুলো কে হায়েনার হাত থেকে রক্ষার দাবিতে হায়েনাদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে আগামী ০২/০৬/২০২১ তারিখ হতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি অনশন ধর্মঘট সিধান্ত নিয়েছে। যেহেতু সরকার ঘোষিত লকডাউন ৩০ তারিখ পর্যন্ত বলবৎ আছে, যদি লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি না করা হয় উক্ত কর্মসূচির কোনো পরিবর্তন হবে না।
তিনি আরও লিখেন, আসুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর কে নিরাপদ রাখতে, হায়েনাদের বিচারের দাবীতে। আসুন পৌরসভা কে ভবিষ্যৎ এর অগ্নিসংযোগ থেকে রক্ষা করার নিশ্চয়তা তে,হায়েনাদের বিচারের দাবিতে।
শিল্প-সংস্কৃতির রাজধানীর এই শহরে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার ধারা অব্যাহত রাখতে, হায়েনাদের বিচারের দাবিতে। আসুন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গুলো রক্ষায়, হায়েনাদের বিচারের দাবিতে। আসুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসীর মঞ্চে, হায়েনা হেফাজতীদের বিচারের দাবিতে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন হেফাজতের তাণ্ডবের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, আজ থেকে ঠিক দুই মাস আগে এটি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম স্থান। রাতে-দিনে যে স্থানে ছিল হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা। মুখরিত ছিল প্রতিটি মুহুর্ত। ঠিক দুই মাস পরে দেখাচ্ছে শত বছরের পুরনো জরাজীর্ণ এক নগরী। ধ্বংসবিধ্বস্ত এক নগরী। এটি আমাদের সকলের পরিচিত স্থান প্রাণের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। যা গত ২৬/৩/২১ তারিখে হেফাজতে-জামাত ইসলাম এর তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শুধু ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার না পুরো বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন বিনষ্টকারী, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংসযজ্ঞে পরিনতকারীদের অন্যতম মূল খলনায়ক ও নেতৃত্ব দানকারী ধর্মব্যবসায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ধ্বংসকারী সাজেদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহ’র গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এবং তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন পুনঃনির্মাণ/পুনঃসংস্কারের দাবিতে, সরকার ঘোষিত লকডাউন শেষে আগামী ১/৬/২০২১ তারিখে সকাল ১১ ঘটিকায় আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের জনগণকে পাশে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন প্রাঙ্গণে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও লিখেন, এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া আমাদের, এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সকল শান্তিপ্রিয় মানুষের। হেফাজতি জামাতি তাণ্ডবীদের না, এটি জানান দেওয়ার সময় এসেছে। সময় এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসির এটি জানান দেওয়ার যে, আমরা কি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ধ্বংসের পক্ষে নাকি বিপক্ষে? আমরা কি শান্তির পক্ষে নাকি হেফাজতি তাণ্ডবিদের উগ্রতার পক্ষে? তবে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তান্ডবিদের প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে যোগ দেই। কেউ থাকুক বা না থাকুক আমি থাকবো। আল্লাহ সর্বশক্তিমান, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে হেফাজতের ব্যানারে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ২৬ মার্চ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালিয়ে জাতির জনকের ম্যুরাল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশসুপারের বাসভবন, জেলা জজের বাসভবন, জেলা সিভিল সার্জনের অফিসসহ ভাংচুরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
এ ছাড়াও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে হরতাল সমর্থকরা শহীদ ধীরেন্দ্রসনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, সুর সম্রাট স্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরীরেত পরিণত করে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।