আজহারুল ছিলেন আসমা আক্তারের তৃতীয় স্বামী। আসমা আক্তার আরও দু’টি বিয়ে করেছিলেন। আসমা আক্তারের দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন ভুক্তভোগী আজহারুলের বড় ভাই। তাদের মধ্যে ২০১৫ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল। গোপনে আসমা আক্তারের সঙ্গে আজহারুলের পরকীয়া সম্পর্ক হয়। পরে সম্পর্কের জেরে তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে আসমা আক্তারের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে আসমা আক্তার পালিয়ে আজহারুলেরকে বিয়ে করেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
মসজিদের ইমামের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে পড়ে এই বিয়েও টিকল না আসমা আক্তারের। শেষমেষ হত্যা করেন স্বামীকেই। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। পরকীয়া প্রেমিকসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসমা আক্তার হত্যার বিষয়ে সব ধরনের পরিকল্পনা ও প্ররোচনা ইমামকে দিয়েছেন। হত্যার পরে আসমা আকতার ইমামকে বিয়ে করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ইমামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তার স্ত্রী ও এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, এ বছর রমজান মাসের ৭ দিন আগে আজহারুলকে তারা হত্যার পরিকল্পনা করে। এ সময় আজহারুল কলেরা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তাদের হত্যার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ওই সময় হাসপাতলে ভর্তি ছিলেন আজহারুল। এরপর আজহারুল সুস্থ হলে ঈদের আগের দিন তারা টাঙ্গাইলের কালিহাতী গ্রামের বাড়ি চলে যান। সেখানেও নিয়মিত আসমা আক্তারের সঙ্গে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানের যোগাযোগ চলছিল।
পরবর্তীতে আসমা আক্তার ইমামের সঙ্গে মোবাইলের শলা পরামর্শ করে গত ১৮ মে অনেকটা প্ররোচনা দিয়ে আজহারুলকে ঢাকা পাঠান। পরদিন ১৯ মে ইমাম আজহারুলকে ফোন করে মসজিদে আসার জন্য বলেন। আজহারুল কাজ কর্ম শেষে গার্মেন্টস থেকে সরাসরি ইমামের সঙ্গে দেখা করতে এশার নামাজের সময় মসজিদে যান। এশার নামাজের পরে মসজিদের ইমাম আজহারুলকে অনুরোধ করে বলেন, ‘তুমি আমার কক্ষে বিশ্রাম নাও নামাজ শেষ করে আমি আসছি’। তখন আজহারুল ইমামের কক্ষে গিয়ে বিশ্রাম নেন। পরে কক্ষে ইমাম এলে দু’জনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক ওই সময় ইমাম আব্দুর রহমান কোরবানির পশু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে আজহারুলকে আঘাত করতে গেলে ভুক্তভোগী টের পেয়ে যান। এতে তাদের দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। আজহারুল ইমামের কক্ষ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সিঁড়িতে পড়ে যান, ইমাম ঠিক তখনই আজহারুলের গলার ডান দিকে ওই ছুরি দিয়ে আঘাত করেন।
এ সময় ইমাম আজহারুলের গলায় আরও কয়েকটি আঘাত করেন। পরে ইমাম আজহারের মরদেহ তার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে মরদেহটি ৬ খণ্ডে খণ্ডিত করে। এরপর খণ্ড করা মরদেহ নিয়ে ব্যাগে ভরে দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেফটি ট্যাংকে ফেলে দেন এবং ওই ট্যাংকির মুখটি সিমেন্টের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখেন। ঘটনার পর থেকে মসজিদের ওই কক্ষে ইমাম না থেকে পাশেই ঢাকা মাদরাসায় গিয়ে অবস্থান নেন।