দেশে প্রথম ছিদ্র করে হার্টের ডাবল ভাল্ব প্রতিস্থাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রথম ছিদ্র করে হার্টের ডাবল ভাল্ব প্রতিস্থাপন
সংগৃহীত ছবি

দিনে দিনে দেশের চিকিৎসকরা নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন ঘটিয়ে জানান দিচ্ছেন উন্নত বিশ্বের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই তারা। বছর দুয়েক আগে হাড় না কেটে হার্টের অস্ত্রোপচার করে চমক সৃষ্টি করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনিষ্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশ্রাফুল হক সিয়ামের নেতৃত্বে একদল তরুণ চিকিৎসক।

এবার ডা. সিয়ামের নেতৃত্বে দেশে প্রথমবারের মতো ২-৩ ইঞ্চি ফুটো করে এমআইসিএস (MICS) পদ্ধতিতে হার্টের ডাবল ভাল্ব প্রতিস্থাপন করা হলো।

universel cardiac hospital

সম্প্রতি হাসিনা বেগম নামে ৩০ বছর বয়সী এক তরুণীর দেহে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা সফলভাবে এই অস্ত্রোপচার করেন। এতে প্রায় ৮-১০ জন চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন এবং ৪-৫ ঘণ্টা সময়ে তা সফলতার সঙ্গে শেষ করেন।

জানা যায়, এই ডাবল ভাল্ব অপারেশন হার্টের অত্যন্ত জটিল অপারেশন এবং এই MICS পদ্ধতিতে মাত্র ২-৩ ইঞ্চি ফুটো করে ভাল্ব প্রতিস্থাপন সারা বিশ্বেই অত্যন্ত বিরল। এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের সুবিধা হলো রোগীর রক্তক্ষরণ কম হয়। ব্যথা কম অনুভব হয় এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে পারেন।

এমন সফল অস্ত্রপচারের ঘটনা দেশের চিকিৎসাখাতের জন্য মাইলফলক বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

কার্ডিয়াক সার্জনস সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ফারুক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের প্রথম অপারেশনের জন্য ডা: সিয়ামকে অভিনন্দন জানাই। হার্টের চিকিৎসায় এটা একটা যুগান্তকারী মাইলফলক।

সার্বিক বিষয় নিয়ে ডা. আশ্রাফুল হক সিয়াম গণমাধ্যমকে বলেন, সারাবিশ্বে হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালে আধুনিক পদ্ধতিতে এমন অপারেশন হয়ে থাকে। আজ আমরাও সেই মাইলস্টোন এ পা দিয়েছি। মনে করি এতে গোটা দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পেরেছি।

এই তরুণ চিকিৎসকের বিশ্বাস এখন আর বিদেশে নয়, বিদেশিরাই আমাদের দেশে হার্টের চিকিৎসা নিতে আসবে ইনশাআল্লাহ।

ডা. সিয়াম জানান, সারাবিশ্ব এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট MICS পদ্ধতিতে সরকারিভাবে প্রথম হার্টের ফুটো অপারেশনের মাধ্যমে পথ চলা শুরু করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় আজ আমরা দেশে প্রথম বারের মতো MICS পদ্ধতিতে মাত্র ২-৩ ইঞ্চি ফুটো করে ডাবল ভাল্বের মতো জটিল অপারেশন করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে দেশসেরা এই কার্ডিয়াক সার্জন বলেন, স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে দেশেই হার্টের ট্রান্সপ্লান্ট শুরু করার।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীর জামালউদ্দিন বলেন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, আমরা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এই ধরনের কসমেটিক সার্জারি শুরু করতে পেরেছি। এই পদ্ধতিতে অপারেশনের সুবিধা হলো রোগীর রক্তক্ষরণ কম হয়, ব্যথাও কম অনুভব হয়।

এই অপারেশনে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অনেস্থেটিকস হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহনাজ, সহকারী অধ্যাপক ডা. সালাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. রোমেনা রহমান, ডা. আসিফ আহসান চৌধুরী, ডা, ইমরান ডা. মঞ্জুর, ডা. ওয়াহিদা ডা. সায়েম, ডা. রুবাইয়াত, ডা. সৌরভ ও ডা. তানভীর হোসাইন।

সফলভাবেই এই জটিল অস্ত্রোপচার শেষ করতে সার্বিক সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন ডা. সিয়াম।

শেয়ার করুন