গাজায় দখলদার ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রায় ১১ দিন ধরে তুমুল লড়াইয়ের পর যুদ্ধবিরতি চলছে। রক্তক্ষয়ী ওই সংঘাতের মূল্য দিতে হয়েছে নিরীহ মানুষকে। এই সংঘাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য বিশেষ কমিটি গঠনের ডাক দেয় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ (ইউএনএইচআরসি)।
জেনেভায় অবস্থিত নিরাপত্তা পরিষদের সদর দফতরের অনুষ্ঠিত এই সংক্রান্ত ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে ভারত। মানবাধিকার পরিষদের মোট ৪৭ সদস্যের মধ্যে ২৪টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট পড়েছে নয়টি দেশের।
ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে ভারতসহ ১৪ দেশ। তবে ওই প্রস্তাবটি পাস হয়েছে। এবার গাজা ও জেরুজালেমসহ বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তদন্ত শুরু করতে চলেছে মানবাধিকার পরিষদ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই প্রস্তাবের জের ধরে ফের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছে।
মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা করেছে ওয়াশিংটন। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে জার্মানি, ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়াও। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্তের পক্ষে সায় দিয়ে প্রস্তাবটিকে সমর্থন জানিয়েছে পাকিস্তান, চীন এবং বাংলাদেশ। আর ভারতের পাশাপাশি ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছে ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, নেপাল নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ। সব মিলিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের দ্বন্দ্বে পুরো বিশ্ব কার্যত দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, মানবাধিকার পরিষদের প্রস্তাব ‘ইসরায়েল বিরোধী’ ও ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বিশ্লেষকদের মতে, পরিষদের প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থেকে ইসরায়েলের পক্ষেই মৌন সমর্থন জানিয়েছে ভারত।
কারণ বিগত কয়েক বছরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত হয়েছে। তাই তেল আবিবকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও চাপের মুখে ফেলতে চায় না নয়াদিল্লি। এই বিষয়ে মধ্যপন্থা নিয়ে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি ইন্দ্রমণি পাণ্ডে দুই পক্ষের কাছেই শান্তি বজায় রাখার ডাক দেন। আলোচনার মধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানান তিনি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামলার ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ যে প্রস্তাব পাস করেছে তা ‘লজ্জাজনক’। তিনি গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনকে ‘বৈধ ও আইনসম্মত’ বলেও দাবি করেছেন।
শুক্রবার একাধারে কয়েকটি টুইটে তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের প্রস্তাবকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যায়িত করে দাবি করেন, এই প্রস্তাব ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যেতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে উদ্বুদ্ধ করবে।