বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের প্রশংসা অর্জন করে চলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গুরত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত যখন বিপর্যস্ত তখন পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিদেশি ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে সহযোগিতার হাত। এই দুই ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থানের নমুনা প্রদর্শন বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট।
২৮ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি মত ও পথের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ভারতকে কোভিড ত্রাণ সরঞ্জাম পাঠানো থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কাকে সংকটের সময় আর্থিক সহযোগিতা, বাংলাদেশ নিজেদের অর্থনৈতিক উত্থানের প্রদর্শন শুরু করেছে এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে এটিকে কাজে লাগাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ২০ কোটি ডলার মুদ্রা বিনিময়ে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এই অর্থ শ্রীলঙ্কাকে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করবে। দেশটির বর্তমান বড় ধরনের ঋণ সংকট কাটিয়ে ওঠতেও কলম্বোর তা কাজে লাগবে।
শ্রীলঙ্কার বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি দেশকে বড় ধরনের অর্থ পরিশোধের ভারসাম্য রক্ষার জটিল মুহূর্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই বছর দেশটির বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৭০ কোটি ডলার। ফলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই সহযোগিতা লঙ্কান অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে ওঠার একটি প্রত্যাশিত উপায় হতে পারে।
সূত্র মতে, এই বছর মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসার ঢাকা সফরের সময় এই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছিল।
অর্থনীতিতে মুদ্রা বিনিময় এমন একটি লেনদেন যাতে উভয়পক্ষ সমান অর্থ বিনিময় করে কিন্তু ভিন্ন মুদ্রায়। এই ব্যবস্থা বিদেশি মুদ্রায় ঋণ গ্রহণের খরচ কমাতে সহযোগিতা করে।
২০১৯ সালের ইস্টারে বোমা হামলার পর থেকেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি গভীর সংকটে রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে আরও প্রকট হয়েছে। এতে দেশটির পর্যটন শিল্প ও অন্যান্য খাতে ধস নেমেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতকে যে ৪০টি দেশ দুই বার কোভিড ত্রাণ সহযোগিতা পাঠিয়েছে বাংলাদেশও এই তালিকায় রয়েছে।
১৮ মে ঢাকা ২ হাজার ৬৭২ বক্স বিভিন্ন অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ এবং কোভিড সুরক্ষা সরঞ্জাম ভারতের হাতে তুলে দেয়। এর আগে ৬ মে ১০ হাজার ভায়াল রেমডেসিভির নয়া দিল্লিতে পাঠায় ঢাকা।
এই অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশ হতে পারে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে কৌশলগত ভূগৌলিক অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নজরে রয়েছে বাংলাদেশ।
এই বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল শুরু করেছে। এর লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা খোঁজা এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক দক্ষতার জন্য চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানেরও প্রশংসা অর্জন করেছে।
বিশ্বব্যাংকের পাকিস্তান কমূর্সচির সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান শীর্ষস্থানীয় একটি পাকিস্তানি দৈনিক পত্রিকায় এক নিবন্ধে লিখেছেন, পাকিস্তানের বর্তমান সরকারসহ সবাই বিশ্বের কাছে ভিক্ষার থালা হাতে হাজির হয়েছেন। বিশ বছর আগে এমনটি অকল্পনীয় ছিল যে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের চেয়ে দ্বিগুণ হবে। একই গতিতে এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউসে পরিণত হবে। পাকিস্তান যদি নিজেদের হতাশাজনক কর্মক্ষমতা বজায় রাখে তাহলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এশিয়ার নতুন রয়েল বেঙ্গল টাইগার
রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ (আরআইএস)-এর অধ্যাপক প্রবীর দে’র মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূলে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেলাইজড স্কিম অফ প্রিফারেন্সেস (জিএসপি) কর্মসূচির সুবিধা আদায় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তগুলো।
প্রবীর দে বলেন, ইইউ’র জিএসপি স্কিমের মাধ্যমে অব্যাহত সহযোগিতায় বাংলাদেশ কৌশলগত রফতানি থেকে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় করতে পারছে। এছাড়া, বেশ বড় অংকের রেমিট্যান্সও আসে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার মিজানুর রহমান দ্য প্রিন্টকে জানান, বাংলাদেশের ফরেক্স রিজার্ভ ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি ডলার। ২০১০ সালে যা ছিল ৯০০ কোটি ডলার। দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি ডলার ছুঁয়েছে।
মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণে বিশ্বাস করে এবং যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ঢাকা এখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে গভীর সংহতকরনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু অন্যদের অবদমন করে নয়।
প্রবীর দে বলেন, বাংলাদেশ হলো এশিয়ার নতুন রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তারা সব জায়গায় একই ভাষায় কথা বলে এবং রয়েছে সুসংগঠিত প্রশাসন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করছে। একই সঙ্গে কয়েকটি আসিয়ান দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করতে চাইছে এবং কানেক্টিভিটি প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে।