করোনা মহামারিতে সরকারের জারি করা বিধিনিষেধের উপেক্ষা করে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলছে রাজধানীর গণপরিবহনগুলো। অতিরিক্ত যাত্রী তুলেও আদায় করা হচ্ছে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া। আর স্বাস্থ্যবিধি মানা তো হচ্ছেই না।
রোববার রাজধানীর শ্যামলী, আসাদগেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, পল্টন, মহাখালী, মগবাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
দেশে চলতি বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার দেশে বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও লকডাউন জারি করে। জরুরি সেবা ছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছিল গণপরিবহনও। পরবর্তী সময়ে গণপরিবহন শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে তাদের আন্দোলনের মুখে প্রজ্ঞাপন জারি করে খুলে দেয়া হয় অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ ও ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন মোট সিটের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ভাড়ার ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে চলবে গণপরিবহন।
প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা প্রথম দিকে কিছুটা মানলেও এখন মানা হচ্ছে না কোনো কিছু। তবে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নিয়মটা এখনো ঠিকমতো মানা হচ্ছে গণপরিবহনগুলোতে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ গাড়িতেই সব সিটে যাত্রী বসিয়েও দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। সাধারণত অফিসে যাওয়া এবং আসার সময়ে এই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে রাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে গাড়ির ভেতরের আলো নিভিয়ে চলাচল করছে গাড়িগুলো।
পল্টন থেকে খামারবাড়িগামী ৮ নম্বর বাসে চড়া যাত্রী সারোয়ার আলম অভিযোগ করে বলেন, গাড়ি ভরে লোক নিচ্ছে কিন্তু ভাড়া একটুও কম নিচ্ছে না। আমি দাঁড়িয়ে থাকলেও ভাড়া নিয়েছে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ।
অন্য এক যাত্রী মাজেদুর রহমান বলেন, এটা কেমন নিয়ম হলো, যেখানে অতিরিক্ত ভাড়াও দেব আবার গাড়িতে দাঁড়িয়ে যাবো। যে নিয়ম কেউ মানে না সে নিয়ম করে লাভ কি। এই নিয়মের কারণে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। গাড়িতে আগের মতই যাচ্ছি আবার টাকাও দিচ্ছি বেশি। এতে তো কারো যায় আসে না, যায় আসে কাদের আমরা যারা গাড়িতে উঠছি চলা ফেরা করছি মাঝখান থেকে লাভবান হচ্ছে গাড়ির মালিকেরা।
সদরঘাট-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী আজমেরী পরিবহনে রোববার সকালে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ায় স্টাফদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, প্রত্যেক সিটে যাত্রী নিচ্ছে অথচ ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।
অতিরিক্ত যাত্রী ও ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হেলপার ড্রাইভারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করতেও দেখা গেছে। তবে গাড়ির হেলপার এবং চালকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা এ ব্যপারে কথা বলতে কোনোভাবে রাজি হননি। বরং যাত্রীদের কাধে দোষ চাপিয়ে দিয়ে বলেন, যাত্রীরা জোর করে গাড়িতে উঠে পরছে।
এদিকে পরিবহন শ্রমিকদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ঢাকার বাইরে হাইওয়েতে চেকিং শুরু করেছি। কেউ বাড়তি ভাড়া এবং যাত্রী নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার ভেতরে সকালে এবং অফিস শেষ হওয়ায় যাত্রী চাপ বেশি থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। আমরা তাদের বারণ করেছি। কিন্তু বিআরটিএ এবং ডিএমপির ম্যাজিস্ট্রেটরা ব্যবস্থা নিলে ভালো হবে।