ম্যানচেস্টার সিটিকে হতাশ করে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন চেলসি

ক্রীড়া ডেস্ক

চেলসি

প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেও ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন হতে পারলো না ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। দুর্দান্ত খেলেও আরেক ইংলিশ ক্লাব চেলসির কাছে ১-০ গোলে হেরে গেলো পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। উল্টো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে নিলো চেলসি।

পোর্তোর এস্টাডিও দো দ্রাগাও স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মেগা ফাইনালে ম্যানসিটিকে হারিয়ে ৯ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপ জয়ের হাসি হাসলো চেলসি। প্রথমার্ধে কাই হ্যাভার্তজের করা একমাত্র গোলই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দিল।

universel cardiac hospital

কোচ হিসেবে সর্বশেষ ১০ বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলেন পেপ গার্দিওলা। এরপর অনেক চেষ্টার পর এবার উঠে এসেছিলেন ফাইনালে। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে কখনো হারেননি তিনি। দু’বার চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন বার্সেলোনাকে। অথচ ফাইনালে জটিল সমীকরণ তৈরি করে চেলসিকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে উল্টো নিজেরাই মাঠ ছাড়লেন শূন্য হাতে।

অন্যদিকে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) বড় প্রজেক্ট হাতে নিয়েও ব্যর্থতার গ্লানি মাথায় নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল থমাস টুখেলকে। গত আসরে ফাইনালে তুলেও পিএসজিকে শিরোপা জেতাতে পারেননি। এরপর এসে তিনি যোগ দিয়েছিলেন চেলসিতে। এসেই টুখেল জিতে নিলেন ইউরোপ সেরার খেতাব।

দুই দলের ডাগ-আউটেও ছিল মগজ খেলানোর দারুণ লড়াই। যেখানে গত আসরে ফাইনালে উঠে হেরে যাওয়া থমাস টুখেল এবং বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ট্যাকটিক্যাল হিসেবে পরিচিত পেপ গার্দিওলা। রেকর্ড গড়েই এ বছর চেলসিকে ফাইনালে তুলে এনেছিলেন টুখেল। আবার ম্যানসিটিকে প্রথমবার ফাইনালে তুলেছিলেন গার্দিওলা। দুই কোচের মগজাস্ত্রের এক উপভোগ্য লড়াই ছিল শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে। যেখানে হারতে হলো গার্দিওলাকে।

ম্যাচের ৪২তম মিনিটে চেলসির হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন কাই হ্যাভার্তজ। অথচ মৌসুমের শুরুতে বায়ার লেভারকুসেনকে প্রায় ৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড ট্রান্সফার-ফি দিয়ে আগের কোচ ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড হ্যাভার্তজকে দলে নেওয়ায় ভ্রু কুঁচকেছিলেন অনেকেই। জার্মানির ২১ বছর বয়সী এই ফুটবলারই যখন ফাইনালে পার্থক্য গড়ে দিল তখন নিশ্চয় সবার অলক্ষ্যে মুচকি হাসছিলেন ল্যাম্পার্ড।

হ্যাভার্তজ, বেন চিলওয়েল, টিমো ওয়ের্নারের মতো একাধিক প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে দলে নিয়ে এসেও মৌসুমের মাঝপথে দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছিল ল্যাম্পার্ডকে। মাত্র চারমাস আগে দায়িত্ব নিয়ে মৌসুম শেষে চেলসির সেই ফুটবলারদের নিয়েই বাজিমাত করে টুখেল যেন বুঝিয়ে দিলেন সম্পদ কিভাবে কাজে লাগাতে হয়।

চেলসির সংগঠিত রক্ষণ দেয়াল ছিল খুবই শক্তিশালী। যা ভেদ করার সুযোগই পেলেন না রায়াদ মাহরেজ, কেভিন ডি ব্রুয়েনরা কিংবা পরিবর্তিত হিসেবে মাঠে নামা গ্যাব্রিয়েল হেসুস, সার্জিও আগুয়েরোরা।

৩৯ মিনিটে আবার সিটির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা চোট পেয়ে মাঠে ছাড়েন। সিটির জন্য হয়তো এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। সিলভার অনুপস্থিতিতেই ৪২তম মিনিটে গোল করে বসেন কাই হ্যাভার্তজ।

পাল্টা-আক্রমণে গোলরক্ষক এডোয়ার্ডো মেন্ডির বাড়ানো বল চিলওয়েল হয়ে ম্যাসন মাউন্টের পায়ে পড়তেই তিনি থ্রু বাড়ান হ্যাভার্তজের উদ্দেশ্যে। গোললাইন ছেড়ে সিটির আগুয়ান গোলরক্ষক এডারসনকে প্রথমে পরাস্ত করেন লেভারকুসেনের সাবেক এই ফুটবলার। এরপর ঠান্ডা মাথায় ফাঁকা গোলে বল রেখে গ্যালারিতে ৬ হাজার চেলসি সমর্থককে আন্দোলিত করে তোলেন তিনি।

যদিও ম্যাচের বাকি সময়টা থিয়াগো সিলভার অভাব বুঝতেই দিলেন না সিজার অ্যাজপিলিকুয়েতা, আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেনরা। চেলসিকে আর জায়গা ছেড়ে দেননি তারা; কিন্তু ম্যানসিটিও আর কোনো গোলের দেখা পেলো না।

খেলা শেষ হওয়ার প্রায় আধঘন্টা আগে সিটির জন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনে কেভিন ডি ব্রুয়েনের চোট। আন্তোনিও রুডিগারের সঙ্গে সংঘর্ষে চোখে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় এই বেলজিয়ানকে। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন ব্রাজিলিয়ান হেসুস। কিন্তু চেলসির আঁটোসাটো রক্ষণের ডেডলক খোলা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।

বরং ৭২ মিনিটে চেলসির হয়ে গোলের ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন বদলি হিসেবে নামাব ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ। আরেকজনের কথা না বললেই নয়, তিনি এনগোলো কন্তে। সারা মাঠ দৌড়ে যেন একাই হারিয়ে দিলেন সিটিকে। ৭৭ মিনিটে আগুয়েরো মাঠে নামলেন বটে; কিন্তু ফেয়ারওয়েল ম্যাচে সিটির জার্সিতে অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের মতো কিছুই করতে পারলেন না তিনি।

নির্ধারিত সময়ের একেবারে অন্তিম মিনিটে আচমকা একটা সুযোগ পেয়েছিলেন সিটির মাহরেজ; কিন্তু তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর সংযুক্তি সময়ের ৭ মিনিট গোলদুর্গ অক্ষত রেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন চেলসি ফুটবলাররা।

ম্যাচ শেষে গর্বিত চেলসি ম্যানেজার টুখেল বলেন, ‘এই শিরোপাটা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে পারাটা সত্যিই অসাধারণ। আমরা এটা জিততে পেরেছি। ওয়াও, আমি জানি না কী যে অনুভুতি হচ্ছে। আমি খুবই গর্বিত যে এখানে (চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে) টানা দ্বিতীয়বার এসেই জয় করে ফেললাম। অনুভূতিটা তাই একটু ভিন্নই।’

খেলোয়াড়দের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়রা খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিল এটি জয় করার ব্যাপারে। আমরা চেয়েছিলাম তাদের (ম্যানসিটি) পায়ে পাথর তৈরি করে দিতে। খেলোয়াড়দের বলেছি বারবার- স্টেপ আপ, স্টেপ আপ। আরও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাও।’

শেয়ার করুন