শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ফাইল ছবি

করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে টানা ১৫ মাস বন্ধ থাকার পর গত বুধবার (২৬ মে) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঘোষণা দেন- ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। এর একদিন পরই অন্য একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলেই (সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া ঠিক হবে না।

রোববার (৩০ মে) শিক্ষামন্ত্রীর সুরে কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না। অন্যদিকে করোনায় গত তিন দিনে শনাক্তের হার গড়ে ১২ শতাংশের বেশি। আবার করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আরও সাত জেলায় লকডাউন দেওয়া কথা ভাবছে সরকার। সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১৩ জুন খুলবে কি খুলবে না- তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও সরকার সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে আসার যে শর্ত দিয়েছে, সে অনুযায়ী আগামী ১৩ দিনে সংক্রমণ ১২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং কোনো কোনো জেলায় সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণের হার না কমলে দেশব্যাপী চলমান বিধিনিষেধ ৬ জুন থেকে ফের বাড়তে পারে। আট জেলায় লকডাউন দিলে সেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কী হবে? এসব কারণে আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

রোববার দেশে করোনা শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। আগের দিন ২৯ মে শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ১১ শতাংশ এবং তার আগের দিন ২৮ মে শনাক্তের হার ছিল ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত এক সপ্তাহের গড় শনাক্তের হার ১২ শতাংশের বেশি। এ হার আগামী ১৩ জুনের মধ্যে ৫ শতাংশে নেমে আসবে- এমনটি মনে করছেন না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। গত ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণার পর সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছিল। এখন ১৩ জুন খোলার ঘোষণার পর সেই প্রস্তুতিতে ঘষামাজা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সরকারের নীতিনির্ধারণীদের ব্যাপার।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, সরকারের ঘোষিত তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। শেষ প্রস্তুতি হিসেবে স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। আমাদের বিভিন্ন জরিপেও তাই উঠে এসেছে। কিন্তু শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে না এলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যায়, এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন। এ অবস্থায় সরকার ঝুঁকি নেবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

শেয়ার করুন