রাজধানীর কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভাড়া বাসা থেকে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপির (৪৭) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও মামলা হয়নি।
কলাবাগান থানা পুলিশ বলছে, মামলার সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও নিহতের পরিবারের কেউ এখনও মামলা করতে আসেননি। তবে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপি হত্যার শিকার হয়েছেন ধরেই তদন্ত করছে রমনা বিভাগ পুলিশ ও রমনা গোয়েন্দা পুলিশ। নিহতের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্য থেকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও ৬-৭ জনকে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।
সোমবার (৩১ মে) কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের ভাড়া বাসা থেকে ডা. সাবিরার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) ছিলেন।
প্রথমে আগুনের খবরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসায় আগুনের ধোঁয়া দেখতে পান। নিহত চিকিৎসকের শরীরের কিছু অংশ দগ্ধ ছিল বলে জানান তারা। মরদেহ উদ্ধারের পর পিঠে দুটি ও গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পায় পুলিশ।
খবর পেয়ে সোমবার ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা মরদেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করেন।
ক্রাইম সিন ইউনিট জানায়, সাবিরাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা (ব্রুটালি কিলড) করা হয়েছে। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়।
সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ইন্সপেক্টর শেখ রাসেল কবির বলেন, ‘ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পোড়ার ক্ষত আছে। আমরা আপাতত নিশ্চিত হয়েছি- এটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে, মধ্যরাতে কোনো এক সময় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে।’
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর কলাবাগানের ভাড়া বাসা থেকে ডা. সাবিরার রক্তাক্ত মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কলাবাগান থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রমনা বিভাগের কলাবাগান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, মামলার সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলার বাদী হিসেবে থানায় আসেননি। পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ এলে মামলা নথিভুক্ত করা হবে।
রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চিকিৎসক সাবিরা নিহতের ঘটনায় গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার জনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তারা হলেন- সাবলেট থাকা শিক্ষার্থী, তার এক বন্ধু, গৃহপরিচারিকা ও বাড়ির দারোয়ান রমজান। পরে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও ৬-৭ জনকে হেফাজতে নেয় ডিবি পুলিশ।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার রমনা গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ডাক্তার সাবিরা নিহতের ঘটনায় যাদেরই জিজ্ঞাসাদের প্রয়োজন মনে হয়েছে, তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত পর্যায়ে এখনই বেশিকিছু বলা যাচ্ছে না।
এর আগে সোমবার তিনি জানিয়েছিলেন, ডা. সাবিরা কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তিনি ফ্ল্যাটের দুটি রুম এক তরুণীকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন। সকালে সাবলেটে থাকা তরুণী হাঁটতে বের হয়েছিলেন। হেঁটে এসে তিনি বাসায় ফিরে দেখেন চিকিৎসক সাবিরার রুম বন্ধ। রুমের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরে তিনি দারোয়ানকে ডেকে চাবি এনে রুমের তালা খুলে দেখতে পান চিকিৎসক সাবিরা ফ্লোরে পড়ে আছেন। সবাই ভেবেছিলেন চিকিৎসক আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরে ডিবি এসে তার গলায় একটি আঘাতের চিহ্ন ও পিঠে দুটি আঘাতের চিহ্ন পায়। আমরা তদন্ত করছি। আশা করছি দ্রুত রহস্য উদঘাটন করব।
সাবিরার মামাতো ভাই মো. রেজাউল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। বিষয়টিকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, আমরা এখনও কাউকে সন্দেহ করছি না। তদন্তের পর পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে।