চলতি অর্থবছরের (২০২০-২০২১) চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ বাড়ছে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার। এর ফলে বাজেটের আকার দাঁড়াচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকায়। টাকার অঙ্কে এই বাজেট চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। এটি বর্তমান সরকারের টানা ১৩তম এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট। অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, চলমান করোনা মহামারির প্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যখাত গুরুত্ব পাবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি এবারের বাজেট গত অর্থবছরের তুলনায় বড় হবে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট ৬ লাখ কোটি টাকার হবে। গত বছর আমরা করোনার প্রথম ঢেউ দেখেছি। তখন আমাদের অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আরোপিত লকডাউনের (বিধিনিষেশ) কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থবির হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
তিনি আরও বলেন, করোনা প্রতিরোধে সারাদেশের মানুষকে টিকা দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। এর ফলে করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব হবে। করোনায় এখন পর্যন্ত যে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করতে সরকারকে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, গত অর্থবছরের রেভিনিউ (রাজস্ব) টার্গেট আরও কম ছিল। কিন্তু সেটা আমরা অর্জন করতে পারিনি। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুব একটা ভালো না। ভ্যাট-ট্যাক্স যেখান থেকে আদায় হয় সেই ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা সংকটপূর্ণ। সেখানে রাজস্ব বোর্ড তিন লাখ ৩০ হাজার রাজস্ব কীভাবে আদায় করবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আবার এটাও সত্য, কিছু খাতে আমরা ভালো করছি। এ কারণে আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ বছর আমাদের অনেক খরচ দরকার আছে। এ জন্য বড় বাজেট দরকার।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ডা. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এবারের বাজেটে করোনা ভ্যাকসিনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। ভ্যাকসিনেশন যদি ঠিক মত করতে না পারি, তাহলে কোনো না কোনো সময় ভারতের অবস্থানে পড়ে যাব।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মানুষের ভোগ কাঠামো ঠিক রাখতে একদিকে খাদ্য সাহায্য অপরদিকে প্রত্যক্ষ আর্থিক সাহায্য—এই দুটির ওপর জোর দিয়ে বাজেট রাখতে হবে। এটাকে সাধারণভাবে নিরাপত্তা বলয়ের বেষ্টনী বাড়ানোর চিন্তা করলে হবে না। এটাকে বাহ্যিকভাবে চিন্তা করতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেট বাস্তবায়নে অপচয় ঠেকাতে সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানো এবং দুর্নীতি রোধে সর্বোচ্চ নজরদারি করতে হবে। বাজেটে নতুন কোনো প্রকল্প নেয়ার আগে পুরাতন প্রকল্পগুলো স্বচ্ছতার ভিত্তিতে শেষ করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের মতো আসন্ন অর্থবছরের বাজেটেও স্বাস্থ্যখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার কোটি টাকার মতো বেশি। তবে ভ্যাকসিনসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাবে বরাদ্দের হবে পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ থাকবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে ২২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগকে দেয়া হবে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।
এদিকে নতুন অর্থবছরে করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য দুই প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হবে ৩ হাজার ২৯৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাজেট অধিবেশনে এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার কথা রয়েছে।