গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ টানা তিন দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারকীয় তাণ্ডবের নির্দেশদাতা হেফাজতে ইসলামের জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুফতি মোবারক উল্লাহসহ সকল অপরাধীদেরেকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর লেখা স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের হাত তুলে দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হন এবং সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাউতলি মোড়ে এসে শেষ হয় এবং সেখানে মিছিল পরবর্তী প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওয়াহিদ খান লাভলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা জেলা হেফাজতের সভাপতি সাজিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোবারক উল্লাহসহ চিহ্নিত সকল অপরাধীদেরেকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে আনুমানিক ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর পক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর লেখা স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁনের হাতে তুলে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওয়াহিদ খান লাভলু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম ভূইয়া, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুসলিম মিয়া, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনির হোসেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আব্দুন নূর, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন প্রমুখ।
স্মারকলিপির মূলবক্তব্যে বলা হয়, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নির্দেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে সরকারি-বেসরকারি ৩৮টি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সব ঘটনায় ৫৫টি মামলা করা হয়েছে। কিন্তু তাণ্ডবের নির্দেশদাতা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নিজে বাদী হয়ে এজাহার জমা দিলেও অজ্ঞাত কারণে সেটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হচ্ছে না।
এতে আরও বলা হয়, জেলায় চলা তাণ্ডবের মূলহোতা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহসহ জড়িত সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হোক।
এদিকে লোকমুখে প্রচারিত হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া তাণ্ডবের মূলহোতা সাজিদুর রহমান ও মোবারক উল্লাহ’র নামে যেন কোনো ধরনের মামলা নথিভুক্ত না হয় সেজন্য তদবির করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। কারণ তিনি জানেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হলে তারা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হবেন এবং কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হবেন। এ বিষয়টি নিয়ে ঐ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ব্রাহ্মণবাড়িয়াজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে হেফাজতের ব্যানারে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ২৬ মার্চ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালিয়ে জাতির জনকের ম্যুরাল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশসুপারের বাসভবন, জেলা জজের বাসভবন, জেলা সিভিল সার্জনের অফিসসহ ভাংচুরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
এ ছাড়াও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে হরতাল সমর্থকরা শহীদ ধীরেন্দ্রসনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, সুর সম্রাট স্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মৃত্যুপুরীরেত পরিণত করে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।