বাজেট ২০২১-২০২২ ও জনপ্রত্যাশা

সম্পাদকীয়

মোকতাদির চৌধুরী এমপি
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ও পুনরায় লকডাউন ঘোষণার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্লথ অবস্থা বিরাজমান; এমনকি রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রেও নেই কাঙ্ক্ষিত গতি। এই সংকটময় মুহুর্তে জাতীয় সংসদে গত বৃহস্পতিবার (৩ জুন) ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি দেশের ৫০তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২২তম বাজেট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট।

প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা দেশের মোট জিডিপির ১৭.৫ শতাংশ। এই বাজেটে পরিচালনসহ অন্য খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, এগুলোকে অবশ্যই শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

universel cardiac hospital

একটি বাজেটের মূল লক্ষ্য সম্পদের পুনর্বণ্টন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে ঘোষিত এই বাজেটে আমরা তারই প্রতিফলন লক্ষ্য করেছি।

এবারের বাজেটে করোনাকালে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে যারা বিত্তবান, তাদের কাছ থেকেই বেশি কর আহরণে জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া করোনার টিকা আমদানিতে বাজেটে এবারও ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গরিব জনগণের জীবনযাত্রা সহজ করতে প্রস্তাবিত বাজেটে  সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৭.৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.১১ শতাংশ। দেশিয় শিল্পের বিকাশে সবক্ষেত্রে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড’ প্রতিষ্ঠায় পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান তৃতীয় লিঙ্গের কর্মী নিয়োগ দিলে প্রতিষ্ঠানটি কর ছাড় পাওয়ার কথাও প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য।

তবে এবারের বাজেট বাস্তবায়নে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, রাজস্ব আদায়। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো—কোভিড-১৯ এর কারণে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের যেসব সমস্যা আছে। তৃতীয়ত, জনগণের জীবিকার উন্নয়ন। এর জন্য যে প্রণোদনার প্যাকেজগুলো ঘোষণা করা হয়েছে, এগুলো যেন সঠিকভাবে জনগণের হাতে পৌঁছে সেগুলোই চ্যালেঞ্জ হবে। আমরা প্রত্যাশা করব, গত এক বছরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যেভাবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর অর্থাৎ ২০২১-২০২২ অর্থবছরেও সেভাবেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতার প্রমাণ রাখবে।

শেয়ার করুন