সংসদে রোজিনার মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানালেন রুমিন ফারহানা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রুমিন ফারহানা
ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি রুমিন ফারহানা। এ ছাড়া সচিবালয়ে রোজিনাকে ৬ ঘণ্টা ধরে যে হেনস্তা করা হয়েছে, যারা এজন্য দায়ী তাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটাও স্পিকারের মাধ্যমে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন।

রোববার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে চলতি বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

universel cardiac hospital

রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সম্প্রতি স্বাস্থ্যখাতের ভয়ঙ্কর দুর্নীতির খবর এসেছে। হেল্থ টেকনিশিয়ান নিয়োগে মাথাপিছু ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম যখন- ‘এখন এক কোটি নিন, পরে এক কোটি পাবে’, ‘৩৫০ কোটি টাকার জরুরি কেনাকেটা নিয়ে অনিয়ম’, ‘টিকা নিয়ে দুই ধরনের তথ্য’, ‘রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিটি গোপনীয়তার’- ইত্যাদি শিরোনামের নানা রিপোর্ট স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরেছেন তখন তাকে চরমভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।’

তিনি বলেন, আমি মানুষের চিন্তা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং উন্মুক্ত গণমাধ্যমের স্বার্থে রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, রোজিনাকে ৬ ঘণ্টা ধরে হেনস্তা করা হলো, যারা এর জন্য দায়ী তাদের ব্যাপারে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেটাও আমি আপনার মাধ্যমে জানতে চাই।’

রুমিন বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট বলতে চাই, কোনো গণমাধ্যমকে তার রিপোর্ট প্রকাশের জন্য যদি হেনস্তার শিকার হতে হয়, জীবন হুমকির মুখে পড়তে হয়, তখন আর কোনো গণমাধ্যমই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বিশ্ব গণমাধ্যম সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। এমনকি মিয়ানমার এবং আফগানিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশের চাইতেও ভালো।’

এর আগে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ বাড়লেও গত ১০ বছরের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতের এডিপি বাস্তবায়ন এ বছরই সবচেয়ে কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাজেটের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। অথচ করোনায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ তারা বরাদ্দকৃত অর্থ খরচে অদক্ষতা দেখিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে তবুও বরাদ্দ বাড়ানোর অর্থ যে কী সেটা দেশের মানুষ খুব ভালো জানে। আমরা দেখেছি অকল্পনীয় দামে বালিশ, পর্দা, কাঁটাচামচ কিনতে। এখন দেখা যাচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ২৫০ টাকার বিশেষ সুঁই ২ হাজার ৫০০ হাজার টাকায় কেনা হচ্ছে।’

‘গত বছরও করোনার মধ্যে বাজেট দেয়া হয়েছিল কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে আমরা ন্যূনতম বরাদ্দ দেখতে পারিনি। জিডিপির অনুপাতে মাত্র ৯ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। যেটা নিয়ে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রীও হতাশা প্রকাশ করেছেন। আজকে আমাদের এমন অবহেলার মাশুল দিতে হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট ১৫ শতাংশ এবং জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ বাংলাদেশে।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার নির্দেশনা দেয়ার পরও দেশের ৪২টি জেলায় এখনো সরকারি পর্যায়ে কোনো আইসিইউ নেই কেন? চিকিৎসাসেবা এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ব্যক্তি খাতের ব্যয় কমার বদলে ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ শতাংশ। ফলে স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়।’

বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এই মহামারির শুরু থেকেই টিকা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা নয়ছয় দেখেছি। সেরাম ইনস্টিটিউটের ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ দেয়ার কথা থাকলেও এবং সে বাবদ মূল্য পরিশোধ করার পরও টিকা আসে মাত্র ৭০ লাখ পিস। বেক্সিমকো এর মধ্যেই লাভ করে নিয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় চাপের কারণেই সরকার বিকল্প পথে যেতে পারেনি। এটা কে বলেছেন? বলেছেন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এবং তিনি যখন একথা বলেন সেটা নিয়ে আর সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না। টিকা বিক্রি করে এক ক্ষমতাশালী ব্যক্তির লাভের কারণে রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে।’

শেয়ার করুন