তৃণমূলে যোগ দিলেন মুকুল, মমতা বললেন ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মুকুল রায়

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপি ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতির হেভিওয়েট নেতা মুকুল রায়।

শুক্রবার বিকালে তৃণমূল ভবনে তাকে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। খবর আনন্দবাজার।

মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফেরাকে স্বাগত জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে, শান্তি পেয়েছে, মুকুল ওখানে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল।’ একই সঙ্গে আগামী দিনে আরও অনেকেই দলে ফিরে আসবেন বলে ইঙ্গিত দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, যারা নোংরামির সীমা ছাড়িয়েছে, তাদের নেয়া হবে না দলে।

তৃণমূলে ফেরা নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় মুকুল রায় বলেন, ‘বিজেপিতে থাকতে না পেরেই ফিরে এসেছি। বিজেপি করব না বলেই পুরনো দলে ফিরেছি।’

এর আগে আজ দুপুরে তৃণমূল ভবনে প্রবেশ করেন মুকুল রায় ও তার ছেলে শুভ্রাংশু। পরে সেখানে পৌঁছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। তাদের উপস্থিতেই তৃণমূলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন মুকুল ও তার ছেলে শুভ্রাংশু।

সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেয়ার পর মুকুলকে রাজ্যসভার সাংসদ করতে পারেন মমতা। পাশাপাশি দলীয় সংগঠনে মুকুলকে দায়িত্বশীল পদও দেওয়া হতে পারে।

২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়। সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে লড়ে জেতেন।

সাড়ে তিন বছরের মাথায় ফের পুরনো ঘরেই ফিরলেন মুকুল৷ বিজেপির হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে জয় পাওয়ার পরেও গেরুয়া শিবির ত্যাগ করলেন৷ শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক মহলের ধারণা ছিল নারদার মতো মামলায় নাম জড়িত থাকায় হয়তো বিজেপি ত্যাগ করা সহজ হবে না মুকুলের৷ যদিও পোড়খাওয়া রাজনীতিক মুকুল সেই সমস্ত অঙ্ককে নস্যাৎ করে দিয়ে নতুন করে ইনিংস শুরু করলেন।

কিন্তু বিজেপি-তে সর্বভারতীয় সহ সভাপতির মতো পদ পেয়েও কেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন মুকুল? ভারতীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে, এর নেপথ্য বড় কারণ যে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরের গোষ্ঠী কোন্দল। কারণ প্রথম থেকেই দিলীপ ঘোষ গোষ্ঠীর সঙ্গে মুকুল অনুগামীদের দ্বন্দ্ব বার বার সামনে চলে এসেছিল৷ রাজ্যে দলের সংগঠনকে শক্তিশালী এবং তৃণমূলে ঘরে ফাটল ধরাতেই মুকুলকে দলে টেনেছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা৷ কারণ বঙ্গ রাজনীতিতে তার সাংগঠনিক দক্ষতা অতুলনীয়৷ মুকুলের হাত ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূলের নিচু স্তরের নেতারাও বিজেপিতে নাম লেখাতে শুরু করেছিলেন৷ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি ১৯টি আসন পাওয়ার পর স্বভাবতই বিজেপিতে মুকুলের গুরুত্ব আরও বাড়ে৷ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেয়া নেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ যাদের অধিকাংশই আসেন মুকুলের হাত ধরে৷

২০১৯-এ বিজেপিকে সাফল্য এনে দেয়ার পর ২০২১-এর আগে তার গুরুত্ব আরও বাড়বে বলেই আশা ছিল মুকুল এবং তার অনুগামীদের৷ কিন্তু হল তার একেবারে উল্টো৷ বিধানসভার ভোট যত এগিয়েছে, ততই যেন বিজেপি-তে মুকুলের সক্রিয়তা কমেছে৷ সাংগঠিনক দক্ষতার জন্য খ্যাত মুকুলকে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে প্রার্থী করে বিজেপি৷ যা মুকুল বা তার অনুগামীদের খুব একটা পছন্দ ছিল না৷

২০১৭ সালে যোগ দেয়ার পর বার বার মুকুল বিজেপিকে রাজ্যে ক্ষমতায় আনার জন্য চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু যতবার তিনি সেই চেষ্টা করেছেন, ততবারই দলের অন্দরের রাজনীতিই তাকে দমিয়ে দিয়েছে৷ ফলে তার হতাশাও বাড়তে থাকে৷

নির্বাচনে মুকুল জিতলেও বিজেপির ফল আশানুরূপ হয়নি৷ মুকুলের ক্ষোভও কমার বদলে বেড়েছে৷ ভোটে হারের পর বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলও বাড়তে থাকে৷ অন্যদিকে তৃণমূল শিবির থেকেও বার্তা আসতে থাকে মুকুলের কাছে৷ সংগঠন নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসা মুকুল তাই পুরনো দলেই স্বচ্ছন্দ বোধ করলেন।

শেয়ার করুন