সাভারের ইপিজেড এলাকায় বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এসময় পুলিশের ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাসে ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়াতে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কায় একজন নারী পোশাকশ্রমিক নিহত হয়েছেন।
নিহত জেসমিন বেগম (৪২) খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার খাজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলিভদ্রবাজার এলাকার মধুপুরে ভাড়া বাসায় থেকে গোল্ডটেক্স কারখানায় জুনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, আন্দোলনের সময় আমরা যখন শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছিলাম, আমাদের তখন করার কিছুই ছিল না। ওই শ্রমিক তখন দৌড়ে পালাতে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি খেয়াল না করায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লেগে মাথায় আঘাত পান। পরে সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান জিয়াসমিন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এসপি বলেন, সকালে ঘটনাস্থলে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য ছিল। আমরা শ্রমিকদের সড়ক থেকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়ার অনেকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা শোনেননি। তার পরে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হালকা কাঁদানেগ্যাস ও পানি ছিটিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তা ক্লিয়ার করা হয়েছে।
এর আগে রোববার সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে এক মাসের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস চার্জের পাওনা পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন লেনি ফ্যাশন নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানার প্রায় ৩০০ শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডিইপিজেডের পুরাতন জোনের লেনী ফ্যাশনে কাজ করে আসছেন প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক। এক মাসের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস চার্জের পাওনা পরিশোধ না করে হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাই আজ তারা বকেয়া বেতনের দাবিতে ইপিজেডের গেটের সামনে সমবেত হয়ে ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে শ্রমিকেরা তিন থেকে চারটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এতে বিকেএসপির আম্পায়ারবাহী গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্পপুলিশ জল কামান ও ৫০ থেকে ৬০টি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এসময় শ্রমিকরা দৌড়ে ছুটাছুটি করার সময় জেসমিন বেগম নামের এক শ্রমিক বিদ্যুতের খুটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে বেপজার (ডিইপিজেড) জিএম আব্দুস সোবহান বলেন, ওই কারখানার শ্রমিকরা কোনো এক ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ভুল খবর জানতে পারে, তাদের আজ বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে। এরপর শ্রমিকরা কারখানার সামনে জমায়েত হলে মাইক দিয়ে তাদের জানিয়ে দেয়া হয় কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো বার্তা দেয়নি। তারা ভুল খবর পেয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। এরপর শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, লেনি ফ্যাশন কারখানার মালিক একজন ভারতীয়। অনেক দিন আগে থেকেই করোনার কারণে মালিক ফ্যাক্টরিতে আসেন না। ওই মালিকের দুটি কারখানায় প্রায় ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা দুটি বন্ধ। জানুয়ারি মাসের বেতনও তারা পাননি। তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও আটকে আছে। এখন করণীয় কিছু নাই। ফ্যাক্টরি বিক্রি করতে হবে। এই মুহূর্তে সেই প্রচেষ্টাও চলছে।