ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমনির ঘটনায় পাশে দাঁড়িয়েছেন শোবিজ তারকা, নির্মাতা ও সংশ্লিষ্ট অনেকে। এই অভিনেত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিচার চেয়ে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন তারা। নির্যাতনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে হ্যাশ ট্যাগ জাস্টিস ফর পরীমনিও চালু করা হয়েছে। শোবিজের নানা অঙ্গনের মানুষ পরীমনির পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তীব্র প্রতিবাদ তুলে বিচার চেয়েছেন সবাই।
অভিনয়শিল্পী জয়া আহসান বলেন, পরীমনির খবরটি শোনার পর থেকে বেদনা ও ধিক্কারে মনটা ভরে উঠেছে। আমি কষ্ট পাচ্ছি মানুষ হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, অভিনয় জগতের একজন সদস্য হিসেবে। একবিংশ শতকের অনেকটা পথ পার হয়ে এসে এখনো মেয়েদের এমন লাঞ্ছনা দেখতে হবে। কোনো মানুষ, কোনো মেয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করার মন, মানসিকতা বা দুঃসাহস কোত্থেকে আসে? যে চলচ্চিত্রশিল্পকে রক্তে-ঘামে আমরা তিল তিল করে গড়ে তুলছি, তা এতই নাজুক, এতই খেলো? এ ঘটনা আমরা তলা পর্যন্ত বুঝতে চাই। আমরা দেখতে চাই, এমন দুর্বৃত্তপনার বিচার হয়েছে। দেখতে চাই, কোনো মেয়ে, তা সে যেই হোক- তার সঙ্গে এমন আচরণের অবসান হয়েছে।
কন্ঠশিল্পী কোনাল বলেন, আমরা যে কোনো কিছুতেই হাসি। কেউ ধর্ষিত হলেও হাসি, কেউ মরে গেলেও হাসি, কেউ কান্না করছে তা দেখেও হাসি, কেউ কষ্ট পাচ্ছে তা দেখেও হাসি। হাসাহাসি খুবই ভালো ব্যাপার। কিন্তু আপনার আমার এই স্বার্থপরতার হাসিটা বোধহয় আসে নিজের অক্ষমতা, নিজের ব্যর্থতা থেকে।
মানে আমি যে একজন লুজার, তা ঢাকতে জোরে জোরে হাসতে থাকবো আরেকজনের দিকে আঙ্গুল তুলে। এটাই শ্রেষ্ঠ উপায় নিজেকে বাঁচানোর। ব্রাভো।
পরীমনির এই আর্তনাদ, এই কান্না দেখে, ‘রেইপ’ এবং ‘আত্মহত্যার’ মতো এক্সট্রিম অনুভূতির কথা শুনেও যারা হাসেন, অভিবাদন আপনাদের। আপনি একজন সফল লুজার! আশা করছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরীর পাশে দাঁড়াবে। সঠিক বিচার পাবে পরী। আবার সেই প্রানোচ্ছল প্রাণচঞ্চল সুন্দর পরীকে আমরা পর্দায় দেখব।
অভিনয়শিল্পী সাইফ খান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তীব্র প্রতিবাদ ও লজ্জা জানাচ্ছি বারবার সমাজে নারীর উপর অত্যাচার ও পরবর্তীতে ঐ নারীর চরিত্র নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যে ভাবে সাইবার বুলিং হয় এর জন্য।
মাত্র শুনলাম সাভার থানা মামলাটি গ্রহণ করেছে। আমার মনের পূর্ণ আস্থা পুলিশ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। তদন্ত চলাকালীন সময় আর মন্তব্য করতে চাই না।
কোনো নায়িকা বা আমার সহকর্মী হিসেবে না আমার জন্ম ও একজন নারীর গর্ভে হয়েছে এই ঋণে আবদ্ধ হয়ে নির্যাতিত যে কোনো নারীর পক্ষে আমার অবস্থান থাকে সব সময় এবারও থাকবে।
আমার ফেইসবুকে যারা আছেন দয়া করে কোনো রকম বাজে মন্তব্যের আগে নিজের মা বোনদের দিকে একটু তাকাবেন আর সকল ধর্মেও কিন্তু মা এর জাতির সম্মান অনেক উপরে এটা মাথায় রাখবেন।আমি সঠিক তদন্তের পরে অপরাধীর রাষ্ট্রীয় আইনে সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছি।- সাইফ খান (বিনোদন কর্মী )
চলচ্চিত্র নির্মাতা অনিমেষ আইচ বলেন, পরীমনির সাথে আমার জীবনেও দেখা হয় নাই, কথা হয় নাই, কাজ তো হয়ই নাই; তবু ও সে আমার কলিগ। যে কোনো দু:সময়ে আমি আমার কলিগের পাশে থাকাটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আমি আছি তোমার পাশে।
মাত্র কয়েকদিন আগে একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং পরবর্তী প্রভাবশালী দাপটকে এই চামড়ায় দেখা যাবে। পরীমনি বা ফাতেমা, ওয়াহিমাওয়া বিশাবকে ভয় পায়। উল্টো আক্রান্ত মেয়ের ছবি না পায়। সুতরাং আমরা সবসময় তাকে দেখার জন্য আগ্রহী। তার উপর ইনি একজন নায়িকা, সুতরাং তার সম্পর্কে বিকৃত মন্তব্য করলে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।
দেখা যাক আসল সত্যটা কি? এখন আইনের হাত কতটা শক্তিশালী। যখন একটি কাক মারা যায়, যখন একটি কাক সেখানে এসে জানতে শুরু করে কখন, আমাদের কেকেদেভ সবার কণ্ঠস্বর শুনবে!
অভিনয়শিল্পী শাহানাজ খুশি বলেন, মডেল তিন্নির কথা মনে আছে? হার্টথ্রব মডেল ছিল! বুড়িগঙ্গা সেতুর নিচে লাশ পড়ে ছিল! সব কিছুই জানা ছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। ক্ষমতার সংস্কৃতি সবচেয়ে আলোকিত সময়কে আড়াল করে!
পরীমনি কয়টা প্রেম করবে, কয়টা বিয়ে করবে, কয়টা ডিভোর্স করবে, কার সাথে ডেট করবে, কে প্রিয় হবে, কাকে ঘৃণা করবে এটা একান্ত পরীমনির বিষয়। অনেক বড় বড় ক্ষমতাধরদের সন্তানরা বিদেশে বসে কি করছে, তা সবাই না জানলেও, কেউ কেউ জানে। মিডিয়ার মানুষদের জীবন তো আপনাদের মতো হবে না। তাদের হাসি/কান্না/সৌন্দর্য্য/আনন্দ/পছন্দ একটু হলেও অন্য বোধের জন্যই তো ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র রুপায়ন করতে পারে। আপনাদের বিকৃত রুচির খোরাক তারা নয়, এটা বুঝতে হবে!
যে দেশে করোনায় হাজারো মানুষ কর্ম হারা। পরিবারের নিকটজনকে হারিয়ে দিশেহারা, হাসপাতালগুলোতে রোগী আর রোগীর স্বজনদের নানান অসামন্জস্যতায় দিশেহারা অবস্থা, সে দেশে রাতের বেলা স্ট্যাটাস ক্লাবগুলো আলোকিত হয় সন্ধ্যে থেকে ভোর পর্যন্ত। টাকা এবং ক্ষমতা ব্যবহারে মরিয়া হয়ে উঠে সুইট ভাইয়ারা! এদের কোনো বদনাম নাই! স্ত্রী-সন্তান রেখে যারা ক্লাবে/বাগান বাড়িতে রোজ অসভ্যতা উগরে দেয়,তাদের জন্য কোনো আইন/বদনামী নাই! সকালে স্যুট-টাইয়ে ঢাকা পড়ে সব।
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে যদি মানবিক প্রবৃত্তিগুলোর উন্নয়ন না হয়, তাহলে সবটাই বৃথা আসলে। মানুষ ছাড়া রাস্ট্রীয় আভ্যন্তরীন কোনো অবয়ব হয় কি? সে মানুষ যদি পঁচে যায়/গলে যায়, তবে দেশ অসুস্থ হবে বইকি। সে পঁচা-গলা দুর্গন্ধে সবাই আক্রান্ত হবে,তা হোক আজ,না হয় কাল।
পরীমনির ঘটনার সুষ্টু তদন্ত হোক, দোষী যত ক্ষমতাধর হোক আইন তাকে চিনে নিক, এটা বিনীত প্রার্থনা। ক্ষমতাধর, বীরপুরুষ, ঘোর লাগা সুইট ভাইয়াদের প্রতি আকুল আবেদন, ক্ষমতা, পেশীশক্তি, কিম্বা টাকা দিয়ে নয়, প্রেম দিয়ে মানুষ/সম্পর্ক অর্জন করেন! নতুবা আইন আপনাকে আজ চিনতে না পারলেও, আম-জনতা ঠিকই চিনে রাখছে, প্রতিদান দিতে তারা ছাড়বে না! হয়তোবা দুদিন দেরি হবে!
চলচ্চিত্র অভিনেতা রোশান বলেন, তুই একটা ভালো মনের মানুষ। তুই আমার ভালো বন্ধু। তোকে এভাবে দেখে সত্যি কষ্ট পাচ্ছি। চিন্তা করিস না, অন্যায়কারী দ্রুত সাজা পাবে। আমরা সবাই তোর পাশে আছি পরি।
চলচ্চিত্র অভিনেতা মিশা সওদাগর বলেন, আমরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাই নি পরীমনির কাছ থেকে। তবুও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সর্বক্ষণ তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি থানায় অনুরোধ করেছি মামলা নেবার জন্য।শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর সাথে ও এ বিষয়ে কথা বলেছে সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের।
শুধু পরীমনি নয়,যে কেউ এই ঘটনার শিকার হলে তাদের পাশে সবসময় থাকব।ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করছি। যাতে এরকম ঘটনার পরবর্তী আর যেন কখনও না ঘটে। পরীমনির পাশে আমি এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সবসময় আছে।
অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা বলেন, পরীর এই কান্না নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। একজন নারী হিসেবে, একজন সহকর্মী হিসেবে। সম্মান একটা পিঁপড়ারও আছে। পরীমনি একজন নায়িকা হ্যাঁ, বাংলা সিনেমার নায়িকা। তো! তার সাথে যা খুশি তাই করা যাবে?
এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে যত বড় হচ্ছি তত নিজেকে অতি ক্ষুদ্রভাবে দেখতে পাচ্ছি। একজন নারী সে ঘরের বউ হোক, পার্লারে কাজ করা মেয়ে হোক, বিশাল কাঁচের রুমে বসে অফিস করা মেয়ে হোক, গার্মেন্টস কর্মী হোক, ডাক্তার হোক, লেখক হোক, আর যদি নায়িকা হয় তাহলে তো কথাই নাই!
সবাই কে সহ্য করতে হয়, অসম্মান, সবাইকে। পরীর পাশে আছি। পরী তুমি ভাঙবে না প্লিজ। কার জন্যে প্রতিবাদ করবো আর কার জন্যে করবো না তাও আমাদের ছকে বাঁধা। কী যোগ বিয়োগের পৃথিবীরে বাবা।
চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ বলেন, না মানে না। আইনের কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি সমান এবং বৈষম্য ছাড়াই আইনের সমান সুরক্ষার অধিকারী।
- আরও পড়ুন >> সারাদেশে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত অনেক বেড়েছে
এছাড়াও চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী, অভিনেত্রী শানারেই দেবী শানু, চিত্রনায়িকা অধরা খান, পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, ইফতেখার চৌধুরী, কাবিরুল ইসলাম রানাসহ অনেকে পরীমনির পাশে দাঁড়িয়েছেন।
চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক বলেন, না মানে না। তোমার এই খারাপ সময় থাকবে না, থাকবে তোমার সাহসিকতার প্রমাণ। তোমাকে দেখে প্রতিবাদী হোক আমার দেশের সাধারণ মেয়েরা। পরীমনির সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার বিচার চাই। ।
অভিনেতা রওনক হাসান বলেন, সে যেই হোক। কোনো নারীর প্রতিই এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না! আমরা পুরো ঘটনা জানতে চাই। দোষী ব্যক্তি আইনের আওতায় এসেছে, তার বিচার হচ্ছে তা দেখতে চাই।