তৃণমূলের কোন্দল মেটানোর মিশনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়
ফাইল ছবি

এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল লেগেই আছে। এতে তৃণমূলে লেজে-গোবরে অবস্থা চলছে। সামনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে দলকে চড়া মাশুল দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্র। এজন্য এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের বিরোধ দূর করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজার জেলার সঙ্গে চকরিয়া উপজেলার নেতাদের মধ্যে থাকা দূরত্ব দূর করা হয়েছে। ওই দুই সাংগঠনিক জেলার নেতারা বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। সোমবার (১৪ জুন) কুমিল্লা উত্তর-দক্ষিণ জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিকালে হবিগঞ্জ জেলার কমিটি নিয়ে আলোচনায় বসেন ওই জেলার নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতারা।

আগামীকাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সকল সংসদ সদস্যকে নিয়ে মিটিংয়ে বসবেন নেতারা। বুধবার (১৬ জুন) চাঁদপুর ও লক্ষীপুর জেলার সংসদ সদস্যদের নিয়ে, ২৪ জুন কুমিল্লা উত্তর জেলার বর্ধিত সভা, ২৬ জুন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার কর্মিসভা করবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী ১৯ ও ২০ জুন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে থাকা বিরোধ দূর করতে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ গণমাধ্যমকে বলেন, সংগঠনকে একেবার তৃণমূলে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, শুধু দূরত্ব বা বিরোধ দূর করাই এই কার্যক্রমের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। সংগঠনের সর্বস্তরে চাঙাভাব ফিরিয়ে আনা ও শক্তিশালী করা আমাদের উদ্দেশ্য। কাল মঙ্গলবার (১৫ জুন) পাবনা জেলা সভাপতি সাধারণ-সাধারণ সম্পাদকসহ ওই জেলার পাঁচ উপজেলার নেতাদের নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হেসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠকে বসবেন। সেখানেও বিরোধ দূর করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উপায় বের করা হবে। ওই জেলা-উপজেলার নেতাদের ইতিমধ্যে ঢাকায় এসেছেন।

আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, এবার নতুন কৌশলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। করোনাবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বসছি। আবার জেলা-উপজলা পৌরসভার নেতাদের সঙ্গে বসছি। তাতে করে সুফল আসছে।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, স্বল্প পরিসরে বৈঠকগুলোতে সবাই মন খুলে কথা বলতে পারেন। সমস্যার সমাধানও হয়ে যাচ্ছে। নেতায় নেতায় থাকা দূরত্ব দূর করাসহ সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষেই মূলত কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা।

স্বপন বলেন, নেতাদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর ক্ষেত্রে আমার ভেতরে একটা কনফিউশন কাজ করতো। পরে দেখা যায়, ওইসব নেতা ঢাকায় ডাকলে সম্মানিতবোধ করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এস এম কামাল হোসেন বলেন, দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের অভ্যন্তরে পরস্পরবিরোধী গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এরা দলের ক্ষতি করছে। অধিকাংশ এলাকাই দেখা যায় ব্যক্তিস্বার্থেই দলাদলি। প্রভাব বিস্তার করে রাখার বিরোধ। এগুলো দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, মূলত স্থানীয় সরকার নির্বাচন মাথায় নিয়েই উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ। তাই দ্রুত বিরোধ দূর করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী নেতারা বলেন, দলাদলি ও বিরোধ জিইয়ে রেখে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সুফল ঘরে তোলা কঠিন হবে। তাই যত দ্রুত আভ্যন্তরীণ বিরোধ সামাল দেয়া যাবে দলের জন্য মঙ্গল হবে। এর ব্যতয় ঘটলে দলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। এসব দিক আমলে নিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনারও বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে নেতাদের প্রতি।

গত শনিবার আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের বলেন, দলের বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এর মাশুল গুণতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করলেই কেবল যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা সম্ভব।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানান, এই পরিস্থিতি বাড়তে দেয়া হলে মাঠ পর্যায়ে খুনোখুনি পর্যন্ত গড়াতে পারে, এমন তথ্য রয়েছে দলটির শীর্ষ নেতাদের কাছে। তাই দ্রুত বিরোধ দূর করার পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় সাংগঠনিকভাবে জিমিয়ে পড়েছে। নেতায় নেতায় বিরোধও রয়েছে বেশ কিছু জেলায়। আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিরোধপূর্ণ জেলা-উপজেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিরোধ দূর করবে।

শেয়ার করুন