ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা দায়েরের পর দ্রুত সময়ে আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। ঘটনার পর নানা জায়গায় বিচার চেয়ে কোনো আশ্বাস না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন দাবি করলেও আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রিয় এই নায়িকা। একই সঙ্গে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পরীমনি এসব কথা বলেন।
মামলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পরীমনি বলেন, মামলার প্রস্তুতি নেয়ার পর আসামির পক্ষ হয়ে অনেকে আমাকে নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার, নারী হিসেবে আঙ্গুল তুলবে মানুষ, এমন কথা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাই বলে বিচার চাইবো না আমি? ৪ দিন ধরে সবাই আমাকে এ কথা বলেছে। ইজ্জত তো হানি হয়েছে। এ কথা না বললে কি আমার ইজ্জত ফিরে আসবে?
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরীমনি বলেন, ক্লাবের ওখানে যাওয়ার পরে নাসির আমাদের বলেন, আপনারা নামতে পারেন, সমস্যা নেই, নিরাপত্তা আছে। কোনো ক্লাবে হুট করে যাওয়া যায় না। তাছাড়া তখন রাত প্রায় ১২টা। প্রথমে সিকিউরিটি আমাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না। আমি প্রথমে তার (নাসির) নাম জানতাম না। পরে আমি নাম জানতে পারি। আমি এইটুকু জানতে পারি তিনি বেনজির আহমেদের (আইজিপি) বন্ধু। আমি শুধু অমির নাম জানতাম। আমি নাম জানি না বলে কি পুলিশকে ঘটনা বলবো না? সিসিটিভির ফুটেজ আছে না। সেটা দেখলেই আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে। চার দিন ধরে তার লোকজন দিয়ে আমাকে সরি বলেছে। চার দিন ধরে আমাকে ধরিয়ে রাখা হয়েছে। সে যদি ভিকটিম হয়ে থাকে তাহলে সে কেন যায়নি থানায়?
দামি মদের বোতল নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে পরীমনি বলেন, এখন তারা তো কিছু একটা বলতে হবে। ১৫ সেকেন্ডর ভিডিও শোনেন। ওই ভিডিওর কথাগুলো কানে নিতে পারবেন না। তারপরও যদি তারা এই অভিযোগ করেন তাহলে কিছু বলার নেই। আমাকে কেন আঘাত করলো, সেটা আমি জানি না।
ক্লাবের সদস্য নাকি আপনার দাওয়াত ছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সদস্য না। দাওয়াতও ছিল না।
সাধারণ একজন নারী হিসেবে এই ধরনের ঘটনায় বিচার চাওয়া কঠিন হয়ে যায়। সে হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতার বিষয়ে যদি বলতেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি গত চার দিন ধরে বুঝে গেছি কত কঠিন। আমি যতক্ষণ না এর সুবিচার পাবো ততক্ষণ লড়ে যাবো।
আসামি গ্রেপ্তার ও গণমাধ্যম পাশে থাকায় ভরসা পাচ্ছেন জানিয়ে পরী বলেন, আমি এখন ভরসা পাচ্ছি। আপনারা (সাংবাদিকরা) আমার পাশে আছেন। আমি এখন উঠে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছি। আমি এখন পুরোটা লড়তে চাই।
রোববার রাতে ফেসবুকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পোস্ট দেয়ার পর রাতেই নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন পরীমনি। তিনি জানান, ৯ জুন (বুধবার) রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বুধবার রাতে উত্তরার বোট ক্লাবে ঘটনাটি ঘটে। নাসির উদ্দিন নামে একজন তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে এ ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন।
সোমবার সকালে অভিনেত্রী নিজে বাদী হয়ে সাভার থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ৬ জনের নামে মামলা করেন। সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে তিন নারী ও এক সহযোগীসহ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ব্যবসায়ী ও জাতীয় পার্টি নেতা নাসির উদ্দিন। অভিযানের সময় ওই বাসা থেকে বিদেশি মদসহ বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়।