তিন মাসে বাড়ল ৬৮০২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

খেলাপি ঋণ
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলেও ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেনি। বরং তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে যে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ৬ লাখ টাকা, সেটি জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের শেষে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তি শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের স্থিতির পরিমাণ ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৮ কোটি। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আগের প্রান্তিকে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

অবশ্য গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এবার খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। সেবার একই সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। তবে ওই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২০) দেশে করোনার প্রকোপ ছিল না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুুয়ারি-মার্চ প্রান্তি পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরিত ঋণ দুই লাখ সাত হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৪৫০ টাকা, যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে আট লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৫ হাজার ৯০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ।

বিদেশি ব্যাংকের ৫৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে তাদের খেলাপি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এ ছাড়া বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হয়েছে ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। তাদের মোট বিতরিত ঋণ ৩০ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণে শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক। মার্চ শেষে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ১৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশ খেলাপি। বেসরকারি ব্যাংকের টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি খেলাপি এবি ব্যাংকের, ৪ হাজার ৬০৭ বা প্রায় ১৭ শতাংশ। বিদেশি খাতের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের। তাদের মোট ঋণের প্রায় ৯৮ শতাংশ বা ১৩৫৯ কোটি টাকাই খেলাপি।

এদিকে খেলাপিদের জন্য বরাবরই বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছর ঋণ পরিশোধ না করেও বিশেষ সুবিধায় যারা খেলাপি হননি, তাদের জন্য নতুন করে সুবিধা দিয়ে গত ২৪ মার্চ সার্কুলার জারি করা হয়।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব চলমান ঋণের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং নতুন করে নবায়ন করা হয়নি, এসব ঋণের শুধু সুদ পরিশোধ করলেই ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নিয়মিত রাখা যাবে। এ ছাড়া যেসব গ্রাহকের ২০২০ সালের সুদ বকেয়া রয়েছে তারা চলতি বছরের মার্চ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ৬টি ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। একই সঙ্গে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত যে সুদ আসে, তাও ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।

আগে চলমান ঋণের কিস্তি প্রতি মাসে পরিশোধ করতে হতো। এ ছাড়া তলবি ঋণ চলতি মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। এভাবে পরিশোধ করা হলে ঋণ খেলাপি করা যাবে না।

খেলাপি ঋণ বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এর অন্যতম কারণ হলো মহামারি করোনায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ট্রান্সপোর্ট বন্ধ ছিল। এতে করে ব্যবসায়ীদের আয় কমেছে।

তিনি আরও বলেন, রপ্তানি বাণিজ্য ও পণ্যের চাহিদা কম বলে অর্থনীতি এখনো চাঙা হতে পারেনি। ফলে ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকে। আবার অনেকে কিছু বিশেষ সুবিধার আশায় বসে আছেন। ইচ্ছা করে ঋণ পরিশোধ করছেন না। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

শেয়ার করুন