মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংসদীয় কমিটির পশ্চাৎগামী চিন্তার সাথী হতে পারি না

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পারলাম যে, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিকল্প খুঁজতে গত ১৩ জুন (রোববার) একটি সুপারিশ পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। ওই বৈঠকে কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ‘সাধারণত নারীরা জানাজায় অংশ নেন না। এটা নিয়ে সমাজে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে যেখানে নারী ইউএনও আছেন, সেখানে বিকল্প একজন পুরুষ কর্মকর্তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’

আমরা মনে করি, নারীর ক্ষমতায়ন যখন বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অভিযাত্রা হিসেবে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে সকল সুসভ্য ও অগ্রগামী মানুষের কাছে গৃহীত তখন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার সম্মান গার্ডে নারী কর্মকর্তার বিকল্প খোঁজা অভব্য, অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয় একটি উদ্যোগ।

universel cardiac hospital

আমাদের অগ্রবর্তী চিন্তার অধিকারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমাজ জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনসহ সর্বত্র নারীর ক্ষমতায়ন চলছে অব্যাহত গতিতে, তখন এমন একটি চিন্তা কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত দেশ বাংলাদেশে গ্রহণীয় হতে পারে না। একইসঙ্গে আমরা সচেতন ও মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির নাগরিক সমাজ কখনও এমন ধরনের পশ্চাৎগামী ও নিন্দনীয় চিন্তার সাথী হতে পারি না।

গার্ড অব অনার প্রদানের ক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের বিরত রাখতে ‘নারী বিদ্বেষী’ এই সুপারিশে জানাজায় মহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারে না বলে যে ফতোয়াও বা অজুহাত টানা হয়েছে সেটিও মূল বিষয়ের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। কেননা জানাজা একটি আলাদা বিষয়। কিন্তু আর গার্ড অব অনার একটা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। এই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়ার দায়িত্ব যে পদের কর্মকর্তার, সেই পদে যে থাকবে, সেই দেবে। তাছাড়াও বাংলাদেশে নারী ইউএনও বলে কোনো পদ নেই। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার মাধ্যমে এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সুতরাং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত নারীদের কাজের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করার বিষয়ে কমিটির এমন অযাচিত এবং অবিবেচনাপ্রসূত সুপারিশ শুধু বৈষম্যমূলক, সমতা ও ন্যায্যতার মূলনীতির পরিপন্থীই নয়, মানবাধিকার বিরোধীও। এমন সুপারিশ সংবিধানের ১৯ (৩), ২৭ এবং ২৮ অনুচ্ছেদ এবং সরকারের নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত অবস্থানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এমনকি এধরনের সুপারিশ সরকারের নারী উন্নয়ন নীতি ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৫ (জেন্ডার সমতা) এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

কাজেই আমরা আশা করব যে, প্রস্তাবের উদ্যোক্তাগণ অবিলম্বে তাদের নিন্দনীয় ও অভব্য প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেবেন।

শেয়ার করুন